কোভিড-১৯-এ মৃত মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য করায় শ্রীলঙ্কায় ক্ষোভ

0

শ্রীলঙ্কায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত দুই মুসলিমের লাশ পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য করার ঘটনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টির প্রতি কষ্টদায়ক বার্তা দিয়েছে। তারা অভিযোগ করছে যে কর্তৃপক্ষ ইসলামি দাফন রীতি লঙ্ঘন করছে।

বিশরুল হাফি মোহাম্মদ জুনাস নামের ৭৩ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি রাজধানী কলম্বোতে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দ্বিতীয় মুসলিম হিসেবে তার লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। দ্বীপ দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৫১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।

বিশরুলের ছেলে ফয়েজ জুনাস (৪৬) বলেন, কিডনি সমস্যায় ভোগা তার বাবা দুই সপ্তাহ আগে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত বলে জানা যায়। তিনি ১ এপ্রিল মারা যান, পরের দিন তার লাশ দাহ করা হয়।

ফয়েজ বলেন, সংক্রমণের ভয়ে তারা তার বাবার জানাজার নামাজ পড়তে পারেননি।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, পুলিশ বাহিনীর তদারকিতে আমার বাবার লাশ একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে দাহ করা হয়। আমরা মর্গের ভেতরে কিছু প্রার্থনা করেছিলাম। কিন্তু তা জানাজা ছিল না।

তিনি বলেন, সরকারের উচিত আমরা যাতে আমাদের প্রিয়জনকে ইসলামি দাফন রীতি অনুযায়ী সমাধিস্ত করতে পারি, সে ব্যবস্থা করা। 

তিনি বলেন, কবর দেয়ার কোনো বিকল্প থাকলে আমাদের সরকারের উচিত তার ব্যবস্থা করা। পুড়িয়ে দেয়াই একমাত্র বিকল্প নয়। আমরা চাই আমাদের প্রিয়জন ইসলামি রীতিতে সমাধিস্ত হন।

শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার কোভিড-১৯ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে যে এই রোগে মৃতদের লাশ পুড়িয়ে ফেলাই সর্বোত্তম। এর আগে মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী দাফন প্রক্রিয়াকে অনুমোদন করা হয়েছিল মন্ত্রণালয়।

এতে বলা হয় যে লাশ ধোয়া যাবে না, একে রাখতে হবে সিল করা ব্যাগ ও কফিনে, যা লাশ গোসল করানোর ইসলামি বিধানের পরিপন্থী।

বাধ্যতামূলক পোড়ানো বন্ধ করার আহ্বান অ্যামনেস্টির

মুসলিম নেতা ও অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া লোকজনকে কবর দেয়া ও পোড়ানো উভয়টিরই অনুমোদন করেছে।

প্রখ্যাত আইনজীবী আলী সাবরি এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, মুসলিমদের লাশ পোড়ানোর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। এই সিদ্ধান্ত হুর নির্দেশিকার পরিপন্থী। কারণ হু বলছে যে লাশ পোড়ানো বা দাফন- যেকোনোটা করা যবে।

শ্রীলঙ্কায় যে চারজন মারা গেছে কোভিড-১৯-এ, তাদের মধ্যে দুজন মুসলিম। মুসলিমদের লাশ পোড়ানোয় শ্রীলঙ্কায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহমদ আল জাজিরাকে বলেন, মুসলিম সম্প্রদায় এই সিদ্ধান্তকে সরকারকে জিম্মিকারী উগ্রপন্থী বৌদ্ধশক্তির বর্ণবাদী এজেন্ডা মনে করছে।

তিনি বলেন, হুর নির্দেশিকা ব্রিটেন, বেশির ভাগ ইউরোপিয়ান দেশ, সিঙ্গাপুর, হংকং ও সব মুসলিম দেশ পালন করছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও অন্তেষ্টিক্রিয়ায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক বিরাজ পাটনায়েক এক বিবৃতিতে বলেন, এই কঠিন সময়ে কর্তৃপক্ষের উচিত সব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করা, তাদের মধ্যে বিভাজন গভীর করা ঠিক হবে না।

শ্রীলঙ্কার ২১ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম ১০ ভাগ। ২০০৯ সালে তামিলদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ২০১৯ সালের প্রাণঘাতী বোমা হামলায় ২৫০ জনের বেশি নিহত হওয়ার পর মুসলিমরা ক্রমবর্ধমান হারে সিংহলি সংখ্যাগরিষ্ঠদের বৈরিতার মুখে পড়ছে।

ইসলামবিরোধী অনুভূতি

যেভাবে লাশের সৎকার হচ্ছে, তা শ্রীলঙ্কার আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অনেকে একে মুসলিমবিরোধী উন্মাদনা হিসেবে অভিহিত করেছেন। অনেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর জন্যও মুসলিমদের দায়ী করছে।

মিডিয়া বিশ্লেষক গুনাবর্ধনে বলেন, কোভিড-১৯-এর মধ্যে এটি খুবই ঝামেলা ও হৃদয়বিদারক বিষয়। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় এই কঠিন সময়েও ইসলামবিরোধী ভাবাবেগ ও মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষ প্রচার বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, এখন সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। ভাইরাস ধর্ম-গোত্র-জাতি চেনে না। আমাদের উচিত হবে একে অপরকে নয়, বরং ভাইরাসটিকে ভয় করা এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।

এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি।

এদিকে ফয়েজ ইস্টার্ন প্রভিন্সে পুনানিতে তার অস্থায়ী কোয়ারান্টাইন সেন্টার থেকে বলেন যে তার বাবার মৃত্যুর খবর তার মাকে জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, তিনি হার্টের রোগী। আমরা তাই ঝুঁকি নিতে পারি না। তিনি এই কষ্ট সহ্য করতে পারবেন না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com