মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর হারানো শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছে কোভিড-১৯

0

কয়েক সপ্তাহ ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করে আসার পর মিয়ানমার এখন শেষমেষ কোভিড-১৯ সংক্রমণের বাস্তবতা স্বীকার করতে শুরু করেছে।

দেশ হয়তো শিগগিরই আরেকটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি হবে, কারণ ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনী বা তাতমাদাউ এই পরিস্থিতিতে ব্যবহার করে সম্প্রতি কার্যকর করা গণতান্ত্রিক অধিকারকে সীমিত করে সামাজিক ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণকে আরও কঠোর করতে যাচ্ছে, যেটা এর আগের জান্তা শাসনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

২ এপ্রিল মিয়ানমার স্বীকার করেছে যে, তারা ১৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত করেছে এবং একজন নিউমোনিয়া ধরণের রোগে মারা গেছে। কিন্তু মাত্র কয়েকশ মানুষকে যেহেতু পরীক্ষা করা হয়েছে এবং দেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামোর যে বিপর্যয়কর অবস্থা, সেখানে এমনকি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও বিশ্বাস করছেন যে, এই সংখ্যাটা কোভিড-১৯ আইসবার্গের চূড়া মাত্র।

মার্চের মাঝামাঝি স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু কির সরকার ২১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন, যারা দেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মোকাবেলা করবে। কমিটির নেতৃত্বে আছেন সু কি নিজে।

৩০ মার্চ দশ সদস্যের আরেকটি কোভিড-১৯ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়, যেটাকে অনেকে তাতমাদাউয়ের ক্ষমতার খেলা মনে করছেন। এই টাস্ক ফোর্স বিভিন্ন আক্রান্তের ঘটনা তদন্ত করবে, নিশ্চিত আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইতিহাস খতিয়ে দেখবে এবং বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাবে। এর মধ্যে ‘ভুয়া খবর’ ও ‘ভুল তথ্য’ প্রচারের দায়ে গ্রেফতারও করা হতে পারে।

নতুন ও আরও শক্তিশালী টাস্ক ফোর্সে সু কি বা এমনকি তার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও যুক্ত করা হয়নি।

বরং এটার প্রধান করা হয়েছে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইন্ত সোয়েকে। সাবেক এই জেনারেলের গ্রেফতার ও ষাঁড়াশি অভিযান চালানোর অতীত রেকর্ড রয়েছে। এমনকি ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভীক্ষুর নেতৃত্বাধীন ‘গেরুয়া অভ্যুত্থান’ বিক্ষোভকালীন সময়ে ভয়ঙ্কর যে অভিযান চালানো হয়েছিল, সেখানেও প্রধান ভূমিকা ছিল তার।

টাস্ক ফোর্সের অন্যান্য সদস্যরা হলেন সামরিক বাহিনীর মনোনীত সু কির মন্ত্রিসভার তিন মন্ত্রী – প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রী। সেই সাথে রয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতাধর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিয়া তুন ও। পাঁচজন বেসামরিক মন্ত্রীকেও টাস্ক ফোর্সে নেয়া হয়েছে।

সরকার যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে জরুরি অবস্থা জারি করেনি, কিন্তু নতুন কমিটির যে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং এই কমিটির প্রধান যেহেতু সাবেক ক্ষমতাধর জেনারেল, তাই এর অর্থ হলো তাতমাদাউ কার্যকরভাবে আবারও চালকের আসনে ফিরে এসেছে এবং এখন আর তাদেরকে সু কির আধা-গণতান্ত্রিক সরকারের আড়ালে লুকিয়ে ক্ষমতার চর্চা করতে হবে না।

ভাইরাস সঙ্কট আঘাত হানার আগেই তাতমাদাউ তাদের শক্তির প্রয়োগ শুরু করে দিয়েছে।

সু কির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তাতমাদাউয়ের ক্ষমতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে পার্লামেন্টে সামরিক বাহিনীর ২৫ শতাংশ অংশগ্রহণ থাকায় তাদের কোন প্রস্তাবই গৃহীত হয়নি। পার্লামেন্টে এনএলডির ওই চেষ্টা চালানোর কয়েক সপ্তাহ পরে এসে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন এই কমিটি গঠিত হলো।

সংবিধানে যে কোন প্রস্তাব পাসের জন্য ৭৫ শতাংশ এমনপির ভোট লাগবে। কিন্তু তাতমাদাউয়ের মনোনীত এমপিরা তাতমাদাউয়ের ক্ষমতা খর্ব হয়, এ ধরণের কোন প্রস্তাব পাস হতে দেয়নি। আগামী নভেম্বরে দেশের পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ অবস্থায় এনএলডি অন্তত নির্বাচনের আগে এটুকু দাবি করতে পারবে যে, তারা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা কমানোর চেষ্টা করেছিল।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com