বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা: লাশ থেকে মহামারি সৃষ্টির তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি

0

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে যম-ভয় চারদিকে। এ ভয়ের কারণে মৃত ব্যক্তির লাশ স্পর্শ পর্যন্ত করতে চাইছেন না স্বজনরা, স্থানীয়রা। তাদের ভয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মৃত ব্যক্তি থেকে তাদের দেহে সংক্রমিত হতে পারে এই ভাইরাস। কিন্তু এ সম্পর্কে একটি নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তাতে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয়ের পর কোনো লাশের শরীর মহামারি রোগ সৃষ্টি করে এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় নি। মহামারিতে মারা যাওয়ার পর মানুষের শরীরে ওই এজেন্টের বেশির ভাগই দীর্ঘ সময় জীবিত থাকে না। তবে লাশের সঙ্গে সংস্পর্শ অব্যাহত রাখলে (কন্সট্যান্টলি ইন কনকাক্ট উইথ করপসেস) তাতে যক্ষা, রক্তবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। এই তথ্য জরুরি বিভাগের কর্মী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে শেয়ার করা উচিত বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা প্রকাশ করেছে তারা। এর শিরোনাম ‘রিস্কস পোজড বাই ডেড বডিস আফটার ডিজঅ্যাস্টারস’।

এতে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে করোনা ভাইরাসে মৃত ব্যক্তি থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে, এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর মহামারি রোগ মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। মারা যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় মানুষের দেহে এসব এজেন্টের বেশির ভাগই সক্রিয় থাকতে পারে না। লাশ থেকে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত যথেষ্ট ঝুঁকি থাকে অল্পস্বল্প ক্ষেত্রে। যেমন কেউ যদি কলেরায় বা রক্তপ্রদাহজনিত জ্বরে (হেমোরেজিক ফিভার) মারা যান, তাহলে এটা ঘটতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো বলেছে, যেসব মানুষ নিয়মিত মৃতদেহ দাফন বা এর দাফন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাদের যক্ষা, রক্তবাহিত ভাইরাস (যেমন হেপাটাইটিস বি, সি এবং এইচআইভি) এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (যেমন কলেরা, ই-কোলি, হেপাটাইটিস এ, রোটাভাইরাস ডায়রিয়া, সালমানেলোসিস, শিগেলোসিস এবং টাইফয়েড/প্যারাটাইফয়েড জ¦রে) সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।

এতে আরো বলা হয়, মৃত ব্যক্তির ভিতরকার রোগজীবাণু বাতাসে ছড়ায়, যেমন ফুসফুসে জমে থাকা বাতাস বেরিয়ে আসার সময় তা বাতাসে ছড়াতে পারে। লাশ নাড়াচাড়া বা তার দাফন প্রক্রিয়ার সময় নাক বা মুখ দিয়ে ফুসফুসের তরল বেরিয়ে আসতে পারে। এসব মাধ্যম থেকে যক্ষা রোগ সংক্রমিত হতে পারে। অন্যদিকে অরক্ষিত ত্বকের সরাসরি সংস্পর্শে রক্তবাহিত ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। এই ভাইরাস আরো সংক্রমিত হতে পারে লাশের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা রক্তের মিউকাস মেমব্রেন অথবা শরীরের অন্যান্য তরল থেকে। এ ছাড়া হাড় বা সূচ ফোটানোর স্থান থেকে বেরিয়ে আসা অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এমন সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।

অন্যদিকে মৃতদেহ থেকে বেরিয়ে আসা মল-মূত্র থেকে সহজেই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণ ঘটতে পারে। মৃতদেহের এসব পদার্থের সঙ্গে শরীরের সরাসরি সংস্পর্শ ঘটলে তা থেকে সংক্রমণ ঘটতে পারে। সংক্রমণ ঘটতে পারে মৃতদেহের কাফনের কাপড় অথবা সংক্রমিত যানবাহন অথবা সরঞ্জাম থেকে। এ ছাড়া মৃতদেহের গোসল করানো পানি সংক্রমিত হওয়া থেকেও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইন সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এসব তথ্য ও ঝুঁকির কথা একই সঙ্গে জরুরি বিভাগের কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া উচিত, যাতে যথাযথ পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করা যায়- যখন মৃতদেহ নাড়াচাড়া করা হয়। একই সঙ্গে আতঙ্ক ও ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো যায়।

এক্ষেত্রে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাতে বলা হয়েছে, যখন গণহারে মানুষ মারা যায় এবং মৃতদের আর শনাক্ত করা সম্ভব হয় না তখন লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেয়ে কবর দেয়া উত্তম। জনস্বার্থের জন্য গণকবর কোনো সুপারিশকৃত বিষয় নয়। এতে প্রচলিত সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ আদর্শগুলো লঙ্ঘিত হতে পারে। লাশের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার সময় পারিবারিক প্রয়োজন ও সামাজিক রীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো উচিত। যদি রীতিতে ভিন্নতা থাকে তাহলে প্রতিটি সামাজিক গ্রুপকে নির্ধারিত এলাকায়, সংশ্লিষ্টি সরঞ্জামের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব মর্যাদা রক্ষা করার চর্চা করতে দেয়া উচিত। যেখানে কবরস্তান বা অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের স্থান পর্যাপ্ত নয় সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

লাশের সৎকারের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের প্রতিও কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এতে বলা হয়েছে, কবরস্থান হতে হবে পানির উৎস, যেখান থেকে পান করার পানি ব্যবহার করা হয়, তা থেকে কমপক্ষে ৩০ মিটার দূরত্বে। পানির স্তর থেকে কমপক্ষে দেড় মিটার উঁচুতে হতে হবে কবরস্থান এবং তা হতে হবে ০.৭ মিটার আনস্যাচুরেটেড জোনে। কবরস্তান বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পৃষ্ঠের পানি যাতে কোনোভাবে আবাসিক এলাকায় প্রবেশ না করে। যখন মৃতের শরীরের রক্ত ও তরল পদার্থ ব্যবস্থাপনা করা হয় তখন সার্বজনীন পূর্ব সতর্কতামুলক ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। শুধু একবার একটি গ্লোভস ব্যবহার করতে হবে এবং তা ডিসপোজ করতে হবে যথাযথভাবে। লাশ বহনের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। লাশ দাফনের পর এবং খাওয়ার আগে ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে ধুতে হবে। ব্যবহৃত যান ও সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করতে হবে। হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধী টীকা নিতে হবে। মৃতদেহ দাফন করার আগে তা জীবাণুমুক্ত করার প্রয়োজন নেই।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com