করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরঞ্জাম সঙ্কট বাংলাদেশে

0

তহবিলে সঙ্কট। প্রশিক্ষণে সঙ্কট। চিকিৎসকদের পিপিইর সঙ্কট। করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড সঙ্কট। এতসব সঙ্কট বাংলাদেশে করোনা মহামারি আতঙ্ককে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের উহানে প্রথম করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে বাংলাদেশ। তা সত্ত্বেও এখানে স্বাস্থ্য সেবার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। নোভেল করোনা ভাইরাসের গুরুতর ঘটনার ক্ষেত্রে তা নিয়ে কাজ করার মতো সমর্থনও নেই।

তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছে।

অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ভেন্টিলেটর সুবিধা সম্বলিত ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রয়েছে মারাত্মকভাবে বেডের সঙ্কট। রয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), করোনা পরীক্ষা করার কিট ও অন্যান্য রিসোর্সের সঙ্কট। সঙ্গে আছে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটলে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতীয় বাজেটের সঙ্কট।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অধিকারকর্মী ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে বলেছেন, একটি দুর্বল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারণে এসব চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। রোগীদের জন্য প্রস্তুত আইসিইউ বেড, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পিপিই সরবরাহের ক্ষেত্রে রয়েছে মারাত্মক সঙ্কট। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি অথবা স্পেন এখন করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে যে অবস্থার মুখোমুখি, তার দশ ভাগের এক ভাগও যদি এখানে ঘটে, তখন আমরা (বাংলাদেশ) এমন পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উঠতে পারবো না। কারণ, আমাদের রয়েছে অপর্যাপ্ত আইসিইউ ফ্যাসিলিটি। এসব ক্ষেত্রে রয়েছে প্রস্তুতিতে ঘাটতি।

বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকা সহ স্থানীয় কিছু এলাকার হাসপাতালে একটি নোটিফিকেশন দেয়া হয়েছে। তাতে পিপিই সরবরাহ সঙ্কটের কারণে চিকিৎসকদের নিজেদেরকেই নিজের পিপিই কিনতে বলা হয়েছে। উপরন্তু রোগ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কর্তৃপক্ষ শুধু বিদেশ ফেরতদের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস পরীক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক ডিরেক্টরেটের মতে, ভেন্টিলেটর সমৃদ্ধ ২৯টি আইসিইউ বেড আছে। করোনায় আক্রান্ত মারাত্মক রোগীদের জন্য এটা অত্যাবশ্যক।

ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমরা পর্যাপ্ত সময় পেয়েছি। কিন্তু আমরা (বাংলাদেশি) এই সময়কে ব্যবহার করতে পারি নি। সরকারের প্রস্তুত হওয়া উচিত ছিল এবং ডাক্তার ও নার্সদের মোটিভেট করা উচিত ছিল। চালু করা উচিত ছিল ইন্স্যুরেন্স ও বিশেষ ভাতা, যাতে তারা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় নিজেদেরকে অনিরাপদ মনে না করেন।

বাংলাদেশে জাতীয় ওষুধ নীতির রূপকার হিসেবে কাজ করার জন্য সুপরিচিত ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি এবং তার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র মাত্র ৩ ডলার মূলের একটি টেস্ট কিট আবিষ্কার করেছেন, যা দিয়ে করোনা ভাইরাস ১৫ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা যাবে। দেশে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিট সঙ্কট থাকায় তার এ উদ্যোগকে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আসার পরেই এই কিট তৈরির কাজ শুরু হবে। বিশ^জুড়ে লকডাউনের কারণে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে বলে মনে করেন ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পাশাপাশি রয়েছে সরকারের অসহযোগিতা। এ জন্য এই কিট উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ধীর গতি বিরাজ করছে।

বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি নাগরিক বিদেশে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তাদের অনেকে দেশে ফিরে এসেছেন। তাদের এই ফিরে আসার প্রক্রিয়াটাকে আরো উন্নততর ব্যবস্থাপনায় করা উচিত ছিল সরকারের এমনটা মনে করেন ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যেসব শ্রমিক ফিরেছেন তাদের ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা নেয়া যেতো। তাদেরকে স্পেশাল কেয়ার এবং কঠোর কোয়ারেন্টিনের অধীনে রাখা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু দেশে ফেরত আসা এসব শ্রমিক এরই মধ্যে যথাযথ নির্দেশনা ছাড়াই তাদের গ্রামে ফিরে গেছেন। এতে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
আনাদোলু আরো লিখেছে, শনিবার এক বিবৃতিতে বিদেশ ফেরত শ্রমিকদের গ্রামে ফিরতে দেয়ায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে আশঙ্কা করা হয়েছে যে, এতে সঙ্কট খারাপ হতে পারে। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিডিপির শতকরা ১০ ভাগ নিয়ে একটি জাতীয় তহবিল গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। বিলম্ব না করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এ বিষয়ে একটি জাতীয় নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে তারা।

ইন্সটিটিউট অব এপিডারমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্সের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে বলেছেন, আমরা ডাক্তারদের প্রস্তুত করছি। আমাদের জাতীয় প্রস্তুতিমুলক নীতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেকোনো সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা এ নীতির অধীনে হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখছি। সারাদেশে আইসিইউ বেড বাড়ানোর জন্য কাজ করছে সরকার। তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য স্থানীয়ভাবে কিট উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত ছিল না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গবেষণাগার। যদি আমরা জরুরিভিত্তিতে অনুমোদন দেই তাহলে আগামী সপ্তাহে তা স্থানীয় পর্যায়ের কিটের জন্য হচ্ছে না। কারণ, ব্যাপক হারে এই কিট উৎপাদনে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সরকারি আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া রয়েছে। আইইডিসিআরের এই কর্মকর্তার কথায় বোঝা যাচ্ছে এই কিট তৈরি আরো বিলম্বিত হবে।

গত সপ্তাহে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, অল্প সময়ের মধ্যেই করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড সংখ্যা ১০০ তে উন্নীত করার জন্য কাজ করছে সরকার। আস্তে আস্তে তা ৪০০ ইউনিট বাড়ানো হবে। তবে তা কোন সময় নাগাদ তৈরি হবে এমন কোনো সময়সীমা দেন নি তিনি।

আনাদোলুর রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো, নৌবন্দর ও স্থল বন্দরে ৬ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের করোনা স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৪৮৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৪৭ জনকে। বাংলাদেশে মোট করোনা রোগী পাওয়া গেছে ৪৮ জন। মারা গেছেন ৫ জন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com