শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্টের জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে কোভিড-১৯

0

রোববার রাত পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১৭ হওয়ার পর তিনটি নতুন এলাকা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। এসব এলাকায় করোনা আক্রান্ত তিনটি ছোট গ্রুপ অবাধে ঘুরে বেরিয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পুত্তুলাম জেলার কাদিয়ানকুলাম, কালুতারা জেলার আতালুগামা ও ক্যান্ডির আকুরানা এলাকার সাবাইকে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে এলাকাগুলো ১৪ দিনের জন্য সিল করে দেয়া হয়েছে।

করোনা আক্রান্ত এই তিনটি গ্রুপ সম্প্রতি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ধর্মীয় সমাবেশে অংশ নিয়ে দেশে ফিরেছে।

শ্রীলঙ্কায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সম্মুখ সারিতে থেকে কাজ করা সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ন্যাশনাল অপারেশন্স সেন্টার ফর প্রিভেনশন অব কোভিড-১৯ আউটব্রেক-এর প্রধান হিসেবে সেনাবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল শাভেন্দ্র সিলভা এই নির্দেশ দিয়েছেন। কলম্বো, কালুতারা, পুত্তালাম, গামফা, ক্যান্ডি ও জাফনা জেলায় অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে শ্রীলঙ্কায় করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী, ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, শনিবার রাতে মারা যান। রোববার কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তার শব দাহ করা হয়।

সারা দেশে কারফিউ অব্যাহত রাখার বদলে অন্যান্য দেশের মতো স্থানভিত্তিক লকডাউনে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে সরকারকে। এতে কারফিউ তুলে দেয়ার পর ব্যাপক ভীড় ও পদদলন প্রতিরোধ করা যাবে। গত সপ্তাহে কলেম্বো ও অন্যান্য জায়গায় এমনটা দেখা যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার জন্য মরিয়া জনগণ নির্ধারিত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মানেনি। এই অতিরিক্ত ভীড়ের কারণেই কলম্বো, গামফা ও কালিতারা জেলায় অনির্দিষ্টকালের কারফিউ বজায় রাখতে হয়েছে।

কারফিউ লঙ্ঘনের জন্য এ পর্যন্ত ৬,২৫০ জনকে আটক করা হয়।

এদিকে কোভিড-১৯ সঙ্কট ও শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) সরকার যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে তা নিয়ে আলোচনার জন্য বিরোধী ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)’র কিছু সদস্য পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। সরকার আশা করছে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং মে মাসের শেষ নাগাদ পার্লামেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করা যাবে। 

সরকার যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। বিভিন্নস্থানে লোকজন মরিয়া হয়ে দোকানপাটে ছুটে যাওয়ার পরিস্থিতি কলম্বোসহ অন্যান্য স্থানকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে বলে সাধারণভাবে স্বীকার করা হয়। এই চরম কঠিন পরিস্থিতিতে সরকারও সাধ্য মত চেষ্টা করছে বলে মনে করা হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা কারো নেই।

আবার খাদ্য ও ওষুধের সঙ্কটের কারণে সারা দেশে না খেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। গুটি কয়েক ধনী লোক খাদ্যের মজুত করলেও বেশিরভাগ মানুষের কাছে মাত্র কয়েক দিনের খাদ্য সামগ্রী রয়েছে। সব দোকান বন্ধ। সরকার বলছে মানুষের দোড়গোড়ায় প্রয়োজনীয় জিনিস পৌছে দেয়া হবে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।

পার্লামেন্টের অধিবেশন বসলে এসব বিষয় উত্থাপিত হতে পারে। শুক্রবার কাতুনায়াক মুক্ত বাণিজ্য জোনের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে কর্মরত হাজার হাজার গ্রামীণ নারী শ্রমিকদের তাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে দেখা গেছে। যাওয়ার আগে ডাক্তাররা তাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখেন।

মিডিয়া ব্যাপকভাবে সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু কাজ ও আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গরীব মানুষের দুর্ভোগ নিয়েও ব্যাপক আলোচনা রয়েছে।

২৫ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মার্চের শুরুর দিকে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়া হয়। তবে সংবিধান অনুযায়ী জরুরি পরিস্থির উদ্ভব হলে প্রয়োজনে পার্লামেন্ট পুনরুজ্জীবিত করে অধিবেশন আহ্বানের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের রয়েছে। 

দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এসএলপিপি’র সাধারণ সম্পাদক বাসিল রাজাপাকসা চার-দফা কৌশল অনুসরণ করছেন। প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসেবে তাকে জনগণের কাছে খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা পৌছে দিতে যে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে তা পরিচালনা, সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

৪০ সদস্যের এই টাস্ক ফোর্সের লক্ষ হলো কোভিড-১৯ সংক্রমণ শূন্যে নিয়ে আসা এবং মাহমারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় যেন জনগণের শক্তি নি:শেষ করে না দেয় তা প্রতিরোধ করা।

গত নভেম্বরে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে গোতাবায়া ক্ষমতায় আসলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার বিষয়টি তার সেই জনপ্রিয়তায় ভাটার টান ধরাতে পারে। এতে আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনে এসএলপিপি’র বিজয় কঠিন হতে পারে।

পার্লামেন্টে এসএলপিপি’র দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হওয়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার জন্য জরুরি, যাতে তিনি তার রাজনৈতিক উন্নয়নের মিশন নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু সেই পথে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে কোভিড-১৯ অতিমারী। তার প্রধান ভোট ভিত্তি রক্ষার জন্য এই অতিমারী নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনীতি ও গরীবদেরও রক্ষা করতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com