আরাকান আর্মির সন্ত্রাসী তকমায় কি মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাড়বে?

0

সোমবার মিয়ানমার সরকার আরাকান আর্মিকে সন্ত্রাসী ও বেআইনি গ্রুপ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটি অপ্রত্যাশিত না হলেও দেশের রাজনীতি ও নিরাপত্তার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে গ্রুপটি ও রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির প্রতি নেপিডোর দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে তুলেছে।

মিয়ানমারে সরকার পরিচালনা একটি জটিল ও বিরোধমূলক বিষয়। ক্ষমতায় ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) থাকলেও বেশ কয়েকটি জাতিগত গ্রুপ সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত রয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সঙ্কট, আং সান সু চি ও রাখাইন নেতৃবৃন্দের মধ্যে উত্তেজনা ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।

আরাকান আর্মি ২০১৯ সাল থেকে লড়াই করে যাচ্ছে। এতে করে অনেক লোক নিহত ও ১ লাখ ৪০ হাজার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আর এর জবাবে নেপিডো ক্রমবর্ধমান হারে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারা আরাকান আর্মিকে টার্গেট করে নিরাপত্তা অভিযানও বাড়িয়েছে।

এর ধারাবাহিকতায় মিয়ানমার সরকার আরাকান আর্মিকে বেআইনি সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে ঘোষণা করল। যুক্তি হিসেবে তারা জানায় যে এই সংগঠনটি দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সো হতুতের সই করা নির্দেশে বলা হয়, আরাকান আর্মি ও এর রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) এবং অন্যান্য সংস্থাকে সন্ত্রাসী ও বেআইনি ঘোষণা করা হলো।

অবশ্য আরাকান আর্মিকে আগেও সরকার সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে অভিহিত করেছিল। তবে তা আনুষ্ঠানিকভাবে করা হয়নি। ফলে সরকারের এই ঘোষণা অপ্রত্যাশিত ছিল না। এমনকি আরাকান আর্মিও এই ঘোষণার পর যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তাতে মনে হয়েছে যে তারাও এতে বিস্মিত হয়নি। তারা জানিয়েছে, মিয়ানমার সরকার অতীতে যেমন গলাবাজী করেছে, এটিও তেমন একটি। আরাকান আর্মি তাদের বিবৃতিতে তাদের কার্যক্রমকে বৈধ দাবি করে রাখাইন রাজ্যের জনগণ তাদেরকে সমর্থন করে বলে দাবি করে।

এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কিছু তাৎপর্যও রয়েছে। এতে মনে হচ্ছে, সরকার এই সমস্যা সমাধানে সঙ্ঘাতের পথকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাছাড়া এই ঘোষণার কিছু সময় আগে যুদ্ধ আরো তীব্র হওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে যে ভবিষ্যতে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা নেই। এখন সঙ্ঘাতের পথই অবলম্বন করবে দুই পক্ষ।

তবে সত্যিকার অর্থে কী ঘটে, তা বোঝা যাবে আগামী সপ্তাহগুলোতে। বিশেষ করে আরাকান আর্মি কী করে এবং এর জবাবে সরকারের পদক্ষেপের মাধ্যমেই আরাকান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যাবে। এসব ঘটনা মিয়ানমারের অন্যান্য গ্রুপগুলোর সাথে শান্তিচুক্তির ওপরও প্রভাব ফেলবে। মিয়ানমারের সামনে কেবল এগুলোই সমস্যা নয়। চলতি বছরই দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। তাছাড়া দেশটি এখন করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছে। এটি দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু তবুও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে আরাকান আর্মিকে সন্ত্রাসী দল ঘোষণার প্রতিক্রিয়া কী হয় তা হবে অন্যতম দেখার বিষয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com