‘একজন থেকে করোনা ছড়াতে পারে ৫৯ হাজার মানুষে’
করোনাভাইরাস নিয়ে বিস্ময়কর তথ্য দিলেন লন্ডনের এক নিবিড় পরিচর্যা বিশেষজ্ঞ। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাস এতটাই ছোঁয়োচে যে, এক করোনা রোগী থেকে সর্বোচ্চ ৫৯ হাজার ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেছেন, এই ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের চেয়ে দ্বিগুণ ছোঁয়াচে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিনের অধ্যাপক ড. হিউ মন্টগোমেরি এই তথ্য দিয়েছেন।
‘করোনাভাইরাস :কীভাবে নিজেকে আইসোলেশনে রাখবেন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল ৪-কে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমি যদি সাধারণ ফ্লুতে আক্রান্ত হয় তাহলে আমার দ্বারা বড়জোর এক দশমিক তিন থেকে এক দশমিক চারজন ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারেন। এভাবে এই আক্রান্ত ব্যক্তিরা অন্যদের সঙ্গে মিশলে তাদের দ্বারা অন্যরা আক্রান্ত হবেন। এভাবে সংক্রমিত সংখ্যা দশগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। তার মানে দাঁড়াল আমার দ্বারা বড়জোর ১৪ জন আক্রান্ত হতে পারেন।’
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আক্রমণে এখন সবচেয়ে করুণ অবস্থা বিরাজ করছে যুক্তরাজ্যের লন্ডন ও স্পেনের মাদ্রিদ শহর। বলা হচ্ছে, শহর দুটির শোচনীয় অবস্থা ইতালির লোম্বার্ডি শহরকেও ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে।
সর্বশেষ যুক্তরাজ্যের দেশ ইংল্যান্ডে নতুন করে আরও ৮৭ জন মারা গেছে। এদের মধ্যে ২১ জনই লন্ডনের। এক সপ্তাহের ব্যবধানে যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা ছয়গুণ বেড়েছে। মঙ্গলবারই মারা গেছে ৭১ জন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক গবেষণা বলছে, লন্ডনে দুইদিন অন্তর করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হচ্ছে। যেখানে প্রতি তিনদিনে দ্বিগুণ হচ্ছে ব্রিটেনে।
ড. মন্টগোমেরি বলেছেন, এই ভাইরাস (করোনাভাইরাস) খুবই, খুবই ছোঁয়াচে। নরমাল ফ্লুর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘নরমাল ফ্লুতে যেভাবে এক ব্যক্তি থেকে তিন ব্যক্তি, ওই তিন ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিগতভাবে আরও তিন ব্যক্তি…এভাবে যখন ১০টি লেয়ার তৈরি করবে তখন আমি ৫৯ হাজার ব্যক্তিকে সংক্রমণের জন্য দায়ী হব।’
এই অবস্থায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। একই সঙ্গে আক্রান্তদের হাসপাতালে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তবে সহজেই এই মহামারির শেষ দেখছেন ড. মন্টগোমেরি। তিনি বলেন, ‘এটি দিনকে দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। আরও বিপুল সংখ্যক লোকের বিপর্যয় ডেকে আনছে।’
সামান্য অসুস্থতাবোধ করলেও অত্যন্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন লন্ডনের এই নিবিড় পরিচর্যা বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, এতে আক্রান্ত হওয়া মানে আপনি শুধু নিজে আক্রান্ত হলেন না, আপনার সঙ্গে অন্যরাও জড়িত।’
‘অনেকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও কোনো লক্ষণ না-ও প্রকাশ পেতে পারে (সুস্থবোধ করা) এবং প্রকাশ পেলেও সেটি খুব হালকা মনে হতে পারে। এ সময় তারা যদি আইসোলেশনে না থাকেন তাহলে তার দ্বারা এই ভাইরাস অন্যদের শরীরেও ছড়িয়ে পড়বে’-যোগ করেন অধ্যাপক ড. হিউ মন্টগোমেরি।
তিনি বলেন, ‘অনেকে আক্রান্ত হওয়ার ১০ দিন পরেও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তখন তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।’