ভয়ংকর হচ্ছে মহামারী

0

পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসজনিত কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত রবিবার থেকে গতকাল সোমবার ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর ডিসেম্বরের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৯৮ জনে। এক দিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৩১ হাজার ৫০৬ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯৭৬। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৫৬০ জন। আর আরোগ্য হয়েছে এক লাখের বেশি। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালিসহ কয়েকটি দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও বেড়েছে ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে ভাইরাসটি আরও ভয়ংকর হচ্ছে।

সংস্থাটির প্রধান তেদ্রস আধানম গ্রেবিয়াসিস গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মহামারী আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে। আমাদের সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, প্রথম রোগী শনাক্তের পর এর সংখ্যা লাখ ছাড়াতে ৬৭ দিন সময় লেগেছিল। দুই লাখ হয়েছে পরের ১১ দিনে। আর তিন লাখ হয়েছে মাত্র তার পরের চার দিনে। তবে ভয়াবহ এ অবস্থার মধ্যেও আমরা হতাশ নই। আমরা ভাইরাসের গতিপথ পাল্টে দিতে পারব। এর আগে গত রবিবার সংস্থাটির আপদকালীন বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, লকডাউন করে ভাইরাস সংক্রমণে আপাতত রাশ টানা গেলেও ভবিষ্যতে তা আবার ফিরে আসতে পারে। ফলে তা ঠেকাতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

চীনে মোট ৮১ হাজার ৫৪ জন ব্যক্তি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ২৭০ জনের। তবে মৃতের হিসাবে চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে ইতালি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৬৩ হাজার। মৃতের হিসাবে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৩৩ হাজার ৮৯ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ১৮২ জনের।

স্পেনের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইরানে। দেশটিতে ২৩ হাজার ৪৯ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৮১২ জনের। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৭০ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪৫৮ জনের। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিনিদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের নেতৃত্বে গঠিত হোয়াইট হাউজ করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের এক কর্মী ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর মাইক পেন্স ও তার পরিবারের করোনাভাইরাসের জন্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরীক্ষায় তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮১ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনা ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ পৃথিবীব্যাপী মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

গত রবিবার সংস্থাটির আপদকালীন বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান এ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, লকডাউন করে ভাইরাস সংক্রমণে আপাতত রাশ টানা গেলেও ভবিষ্যতে তা আবার ফিরে আসতে পারে। ফলে তা ঠেকাতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

এক সাক্ষাৎকারে রায়ান বলেন, ‘এখন আমাদের আসলেই যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার তা হচ্ছে, শারীরিকভাবে দুর্বলদের খুঁজে বের করা। করোনাভাইরাস আক্রান্ত যারা তাদের চিহ্নিত ও আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদেরও আইসোলেট করতে হবে।’ তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু সবকিছু লকডাউন করে দেওয়ার এই চিন্তাভাবনা এ মুহূর্তে বিপজ্জনক। কারণ মানুষের চলাফেরায় আরোপ করা সব বাধানিষেধ যখন উঠে যাবে এবং লকডাউন তুলে নেওয়া হবে তখন ফের রোগটি দেখা দেওয়ার প্রবল ঝুঁকি রয়েছে।

করোনাভাইরাসকে পরাস্ত করতে চীন, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ দিয়েছেন মাইক রায়ান। তিনি বলেন, এ ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এই দেশগুলো লকডাউনের পাশাপাশি যাদের দেহে এ রোগ আছে বলে সন্দেহ করেছে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এ পন্থা অনুসরণীয় বলে মত দিয়েছেন এ বিশেষজ্ঞ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com