করোনায় ঝুঁকি নেবে না বিসিবি
পাকিস্তান সফরের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লীগেও এক রাউন্ড স্থগিত। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে করোনা ভাইরাস। পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে এ বছর সব ধরণের ক্রিকেটই স্থগিত হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শঙ্কায় টাইগারদের মে মাসের আয়ারল্যান্ড সফর। এরপর বাংলাদেশে আসার কথা অস্ট্রেলিয়ার। শ্রীলঙ্কায় টেস্ট চ্যাম্পিয়ানশিপের মিশন ছাড়াও অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়াতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকেও চোখ রাঙাচ্ছে এই মরণভাইরাস। ক্রিকেট বন্ধ হওয়ায় খেলাটির সঙ্গে জড়িত সবাই পড়েছেন বিপাকে। বড় ধরণের ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)।
যদিও ক্রিকেটারদের ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখতে বিসিবি যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন আকরাম খান। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান বলেন, ‘দেখুন, এরই মধ্যে পাকিস্তান সফর স্থগিত হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটও বন্ধ রাখা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই গোটা বিশ্ব এ ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা পাবে। তবে পরিস্থিতি যদি আরো খারাপ হয় তখন আমরা সামনে যেকোনো সিরিজ স্থগিত করতে প্রস্তুত। কারণ এটাই ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা। আমরা তাদের কোনোভাবেই ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না।’
৮ই মে বাংলাদেশ দল যাবে আয়ারল্যান্ড সফরে। সেখানে শুরুতেই বেলফাস্টে ৩টি ওয়ানডে খেলার কথা রয়েছে। একই সফরে তাদের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের মাটিতে ৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রয়েছে। ভেন্যু ওভালসহ চারটি স্টেডিয়াম। বর্তমান বৃটেনের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। ‘ইউরোপের হাব’ বলে পরিচিত ইংল্যান্ডে করোনা মারাত্মক আকার ধারণ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে এখানে ১ বছরও স্থায়ী হতে পারে এই ভাইরাস। এমন পরিস্থিতিতে শঙ্কায় টাইগারদের ইংল্যান্ড সফর। এ নিয়ে আকরাম খান বলেন, ‘আমি শুরুতেই বলেছি আমরা কোনোভাবেই ক্রিকেটারদের বিপদে ফেলার সিদ্ধান্ত নেবো না। প্রয়োজন হলে আয়াল্যান্ড সফর নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই সমস্যা শুধু আমাদের নয়, গোটা বিশ্বের। তাই পরিস্থিতি বুঝেই আমরা যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত আছি।’
‘অন্য’ ভয়ে ঢাকার ক্লাবগুলো
ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ শুরু হয়েছে ১৫ই মার্চ। এরই মধ্যে প্রথম রাউন্ডের ছয়টি ম্যাচ শেষ। তবে এক রাউন্ডের জন্য স্থগিত করা হয়েছে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর। কারণ ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ রাখার। এতে করে ঢাকার ক্লাবগুলোর মধ্যে কাজ করছে অন্য রকম এক ভয়। এই সিদ্ধান্তে ক্লাবের পরিচালক থেকে শুরু করে ক্রিকেটারদের মধ্যে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও। এ নিয়ে সিসিডিএম এর সমন্বয়ক আমিন খান বলেন, ‘আমরা সরকারের নিদের্শের বিষয়ে ক্লাবগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। তবে যেহেতু জাতীয় স্বার্থের বিষয়, তাই লীগের একটি রাউন্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।’
কতদিনে পরিস্থিতির উন্নতি হবে সেই প্রশ্নের জবাব নেই কারো কাছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমিত রোগীর সংখ্যাও দিন বাড়ছে বাংলাদেশে। সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০-এ। যদি শেষ পর্যন্ত লীগ না হয় তবে ক্লাবগুলো পড়বে ক্ষতির মুখে। এ নিয়ে আমিন খান বলেন, ‘ক্ষতি তো হবেই। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আমরা চাইবো সুবিধা মতো সময়ে তা আয়োজন করা হোক। এটি চালু হয়ে গেছে বাদ তো দিতে পারবো না।’ লীগ পেছালেও সূচি মেলাতে ঝামেলা হবে। কারণ মে মাস থেকে টানা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সিরিজ রয়েছে টাইগারদের। ফলে ঢাকা লীগে জাতীয় দলের তারকাদের পাওয়া যাবে না। লীগ তার জৌলুস হারাবে। ক্লাবগুলোর ভয় এটাই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্লাব সংশ্লিষ্ট এক কর্মকতা বলেন, ‘এটি সরকারি সিদ্ধান্ত, আর ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার বিষয়। তাই ক্ষতি হলেও আমাদের কিছু বলার নেই। মেনে নিতে হবে। তবে আশা করবো যে ক্ষতিটা বড় না হয়।’
আজ মাঠে গড়ানোর কথা ছিল ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগের দ্বিতীয় রাউন্ড। কিন্তু তা স্থগিত হওয়ায় গতকাল মাঠে অনুশীলনে আসেনি কোন দল। যদিও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার জিম করে গেছে। এর মধ্যে জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ মিঠুন বলেন, করোনার ভয় এখন শুধু আমার একার নয়, গোটা দেশেরও। তাই সাবধানে থাকতে হচ্ছে। সবাইকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। লীগ স্থগিত নিয়ে একটা কথাই বলবো জাতীয় স্বার্থে ক্রিকেট যদি বন্ধ থাকে আমি তার পক্ষেই আছি। ক্ষতি হলে কিছু করার নেই। নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে হবে।