বিয়ের পর প্রথম ম্যাচ, তাই একটু ‘নার্ভাস’ ছিলাম : সৌম্য
পাকিস্তানে তিন ম্যাচের সিরিজে দুই ইনিংসে মোটে ১২ রান করেছিলেন। সেই রানখরায় ভোগার এক চাপ, তার ওপর বোর্ড থেকে যে ১৬ ক্রিকেটারের কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকা করা হয়েছে, তাতেও তার জায়গা হয়নি। এটাও এক ধরনের চাপ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচসেরা হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে সে চাপের কথা ঠিক স্বীকার করলেন না সৌম্য সরকার। যেনো রাজ্যের দ্বিধা এসে ভর করলো মনে। তবে আকার ইঙ্গিতে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন, রোববার রাতে চুক্তি হওয়া ১৬ জনের মধ্যে তার নাম না থাকায় মন খারাপ হয়েছিল বটে।
তবে আজ যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখন আর মন খারাপ ছিল না। কারণ তার আগেই খবর পেয়ে গিয়েছিলেন যে, তার নামটা ভুলে বাদ পড়েছে। আসলে বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের তালিকায় আছে তার নামও। আজ-কালের ভেতর তার নামও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মোদ্দা কথা, সৌম্যর সরকার জেনে বুঝেই নেমেছেন যে, বোর্ডের বেতন কাঠামোয় তিনি আছেন। এটুকু শুনে হয়তো ভাবছেন, কোনোরকম চাপ নয়, সোমবার নির্ভার হয়েই ব্যাট হাতে নেমেছেন সৌম্য। আসলে তা নয়, ভেতরে এক অন্যরকম চাপ ছিল এ ড্যাশিং উইলোবাজের।
সৌম্য নিজেই জানালেন, সেই চাপ আর টেনশন আর কিছুই না। বিয়ের পর প্রথম খেলতে নামা, তাই একটু ‘ইয়ে’ ছিলেন। এই ‘ইয়ে’ দিয়ে সৌম্য বোঝাতে চাইলেন, আসলে বিয়ের পর প্রথম খেলতে নামার মাঝেও একরকম অস্ফুট চাপ কাজ করে। তাই তিনিও অন্যরকম চাপ নিয়েই খেলতে নেমেছিলেন।
আর চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হবার খবর আজ খেলা শুরুর আগে জেনেছিলেন কি না? জানতে চাওয়া হলে সৌম্য বলেন, ‘হ্যাঁ! ব্যাটিংয়ে নামার আগেই জেনেছি আমি ১৭ নম্বর ক্রিকেটার হিসেবে চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। সত্যি কথা বলতে এ বিষয়টা নিয়ে ওভাবে চিন্তা করিনি। চিন্তায় ছিলাম, বিয়ের পর প্রথম ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি, ফোকাস বেশি ছিলাম। ওই (কেন্দ্রীয় চুক্তি) জিনিসটা তো আমার হাতে নেই, চাইলেও তো আমি বদলাতে পারব না।’
ভারত সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিন নম্বরে খেলে দুই ম্যাচে ত্রিশের ঘরে পা রেখেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ছয়-সাত নম্বরে গিয়ে কিছুই করতে পারেননি। আজ আবার তিন নম্বরে নেমে প্রায় দু’শো স্ট্রাইকরেটে ৩২ বলে ৬২ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়েছেন।
তার মানে ওয়ান ডাউন পজিশনই তার পয়মন্ত, খেলতেও স্বচ্ছন্দবোধ করেন। আসলেই কি অমন কিছু? সৌম্য তা মানতে নারাজ। তার কথা,’দলের প্রয়োজনে যখন যেখানে দরকার সেখানেই খেলতে হবে। আমি সে চেষ্টাই করছি।’
বিয়ের পর প্রথম ব্যাট হাতে নেমেই চার-ছক্কার ফুলঝুরি, অর্ধশতকও হাঁকালেন। যা পুরো টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় (৪৯ নম্বর ম্যাচে)। অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে সৌম্য হেসে বলে ওঠেন, ‘মনে তো হয় বিয়ের পর খেলা ‘চেঞ্জ’ হবে।’
সরাসরি না বললেও সৌম্য আকার ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেন জিম্বাবুূেয়র বিপক্ষে আজকের ইনিংসটি পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ভাল খেলার অনুপ্রেরণা হতে পারে। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানান, ভারতের বিপক্ষে ত্রিশের ঘরে পৌঁছেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তার ধারণা, ঐ দুই ইনিংসে ৩৫ বলে ৩৯ আর ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস দুটির অন্তত একটি বড় করতে পারলে মনোবল চাঙা থাকত, আত্মবিশ্বাসটাও জন্মাত বেশি। তখন পাকিস্তানের বিপক্ষে লাহোরে ভাল খেলা সহজ হতো। কিন্তু তা হয়নি।
ওপরের দিকে নাঈম শেখসহ আরও অনেকে রান করছেন। তবে সৌম্য তা নিয়ে চিন্তিত নন। কোনো নেতিবাচক চিন্তাও নেই। তাই মুখে এমন কথা, ‘সবাই রান করলে দলের জন্য ভালো। দলের মধ্যে সবার প্রতিযোগিতা বাড়ে। যে রান করবে দলের জন্য ভালো হবে। অবশ্যই নাঈম ভালো খেলেছে, অনেকদিন পর আমি তিনে নেমে ভালো খেললাম। যে নিয়মিত ভালো খেলবে সেই থাকবে।’
স্বচ্ছন্দ, সাবলীল ব্যাটিং, ফ্রি স্ট্রোক প্লে এবং চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটানোর পাশাপাশি মোটাতাজা স্কোরবোর্ড- এটা কি শুধু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বলেই? সৌম্য তা মানতে নারাজ।
তার ব্যাখ্যা, ‘২০১৫ সাল থেকে কিন্তু বাংলাদেশের অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। পাকিস্তানে একটু খারাপ হয়ে গেছে বলে সব শেষ হয়ে গেছে তা নয়। ক্রিকেটে পারফরম্যান্স ওঠানামা করেই। ওখানে যেমন পাকিস্তান আমাদের চেয়ে উপরে। ওরা আমাদের উপর ডমিনেট করেছে। এখানে যেমন আমরা জিম্বাবুয়ের চেয়ে ভালো দল। আমরা ওভাবে ডমিনেট করে জিতেছি। অবশ্যই খেলতে গেলে ওভাবেই খেলা উচিত। এখন তো বাংলাদেশ ওইরকম দল না যে খেলার জন্যই কেবল নামে। প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য নামে। হ্যাঁ! পাকিস্তানে খারাপ হয়েছে। পাকিস্তানে আরও এক ওয়ানডে, টেস্ট বাকি আছে। এবার ওখানে ক্যামব্যাক করার চেষ্টা করবে সবাই।’