জেল হওয়ার তিন ঘণ্টা পর বিচারক বদলি করে জামিন

0

পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেওয়ার তিন ঘণ্টা পরই জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে বদলি করা হয়েছে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুবার পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন আউয়াল। গতকাল মঙ্গলবার তিনি তিনটি মামলায় ও তার স্ত্রী লায়লা একটি মামলায় পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিচারক মো. আবদুল মান্নান জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ আদেশের পর আউয়াল ও লায়লার আইনজীবী আদালতে তাদের অসুস্থতার চিকিৎসা প্রতিবেদনসহ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা ও ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করেন। দুপুর পৌনে ৩টার দিকে বিচারক ডিভিশনসহ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য কারা কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এরপর বেলা সোয়া ৩টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে বদলি করা হয়। পরে বিকেলে যুগ্ম জেলা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন জেলা ও দায়রা জজ। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবীরা ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকেল ৪টার দিকে বিচারক বন্ডের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা করে নিয়ে তাদের দুই মাসের জামিন দেন। আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবী আহসানুল হক বলেন, ‘আউয়াল সাহেব ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিন দুই মাসের জামিন দিয়েছেন।’

গত বছর ৩০ ডিসেম্বর দুদকের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে আউয়ালের বিরুদ্ধে খাসজমিতে ভবন নির্মাণ, অর্পিত সম্পত্তি ও পুকুর দখলের অভিযোগে তিনটি মামলা করেন। একটি মামলায় আউয়ালের সঙ্গে তার স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লায়লাকেও আসামি করা হয়। গত ৭ জানুয়ারি আউয়াল ও লায়লা হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন নেন। গতকাল ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তারা পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন।

আউয়ালকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কারাগারে পাঠানোর ওই আদেশের পরপরই আদালতপাড়াসহ পুরো শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে পিরোজপুর শহরসহ জেলার নাজিরপুর, মঠবাড়িয়ায় সব দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। নেতাকর্মীরা জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে অগ্নিসংযোগ করায় বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা বর্তমান এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নামে লেখা ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। এছাড়া জেলা জজ মো. আবদুল মান্নানের অপসারণ দাবি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয় পিরোজপুর আইনজীবী সমিতি। উত্তেজিত নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ আদালতপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করে রেখেছিলেন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা।

শহরে উত্তেজনা ও পুলিশের লাঠিচার্জের পর পিরোজপুর সদর থানার ওসি নুরুল ইসলাম বাদলকে বদলি করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তবে তাকে বদলি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন পিরোজপুরের এসপি হায়তুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘ওসিকে বদলির খবরটি পুরোপুরি গুজব।’ পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘পিরোজপুরের বিচারক মো. আবদুল মান্নানকে বদলি করে আইন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ে তাকে কোন পদে পদায়ন করা হয়েছে এ সংক্রান্ত আদেশের অনুলিপি এখনো আমি দেখিনি।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com