জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হলে লাভবান হবে পলায়নকৃত স্বৈরাচার: ডা. জাহিদ
জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হলে লাভবান হবে পলায়নকৃত স্বৈরাচার জানিয়ে রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করুন, গায়ের জোরে নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা.এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আজকে নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয়, নির্বাচন যদি যথাসময়ে না হয় তাহলে লাভ কাদের? লাভ হচ্ছে পলায়নকৃত স্বৈরাচারের। কাজেই যারা বুঝে অথবা না বুঝে বিভিন্ন দাবি তুলে আজকে নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে চান, তারা কি প্রকারান্তরে স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করছেন কিনা সেটি কি বিবেচনা করেছেন? আজকে যদি স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করেন এবং আপনাদের কর্মসূচির কারণে যদি আজকে কোনো কারণে এই দেশের নির্বাচন হবে কি হবে না এটি নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা জমে, তাহলে লাভবান হবে পলায়নকৃত স্বৈরাচার। সেটির জন্য কি আপনারা ৩৬ জুলাই করেছিলেন?
শুক্রবার (২২ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশ-এর চিকিৎসা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মানসিক কোনো প্রস্তুতি নেই। বাংলাদেশের মানুষ এই পিআর সিস্টেম বুঝে না। কাজেই কোনো অবস্থাতেই এমন কোনো আচরণ মানুষের ওপর, মানুষের সঙ্গে করা উচিত না যেটি দিয়ে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। আর বিভ্রান্ত হলে দেশ, দেশের সার্বভৌমত্ব এবং দেশের অস্তিত্বের জন্য সত্যিকার অর্থে মহাবিপদ ডেকে আনবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, গতকালকে দেখলাম এতদিনে বদিউল আলম মজুমদারের মুখ থেকে কথা বেরিয়েছে। যার জন্য উনাকে ধন্যবাদ এবং সাধুবাদ জানাই যে উনি বুঝতে পেরেছেন। এখন উনি বলছেন, পিআর পদ্ধতি হলে সত্যিকার অর্থে দেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগের মধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশন যে রিকোয়েস্ট করেছে, নির্বাচন কমিশন অনতিবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।
বিএনপি সবসময় মানুষের পাশে থাকে এমন মন্তব্য করে জাহিদ হোসেন বলেন, যারা আজকে দেশের সংস্কারের কথা বলেন এবং দেশের সংস্কারের জন্য চিন্তা করেন, তাদের বোঝা উচিত এই প্র্যাকটিস শুরু করেছে বিএনপি। যারা এখন কথা বলছেন, এসমস্ত দায়িত্ব তারা কোনোদিন পালন করেনি। ভবিষ্যতে হয়তো করতে পারে, সেটা ভবিষ্যত বলে দেবে। কিন্তু, বিএনপি সবসময় মানুষের পাশে থাকে। মানুষের আশাকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা চিন্তা করে।
‘সুশাসনের সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয়তা হচ্ছে জবাবদিহিতা এবং সত্যিকার অর্থে একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ শুরু হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। কারণ বিএনপি সুশাসনে বিশ্বাস করে এবং বিএনপি সুশাসনে বিশ্বাস করে দেখেই আজকে যত কমিশন দেখেন প্রত্যেকটা কমিশনের পেছনেই শহীদ জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার নাম অথবা বিএনপি সম্পৃক্ত।’
বিগত নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ পিছিয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দেশের মানুষকে আগে নির্বাচনমুখী করতে হবে।
৩১ দফা শুধু বিএনপির একক কর্মসূচি নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং সমমনা রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল সবার কর্মসূচি হচ্ছে ৩১ দফা রাষ্ট্র বিনির্মাণের কর্মসূচি। এটি কিন্তু শুধু খালি বিএনপির একক কর্মসূচি নয়। এটা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যারা রাজনীতির মাঠে ছিলেন এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন তাদের সম্মিলিত কর্মসূচির নাম ৩১ দফা।
ড. জাহিদ হোসেন সব রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, আমি সবার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান রেখেই বলতে চাই- আপনারা দয়া করে দেয়ালের লিখন পড়তে শিখুন। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করুন। গায়ের জোরে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। গায়ের জোর থাকা ভালো। গায়ের জোর কোনো পারপাসে আপনি ব্যবহার করবেন সেটি কিন্তু আপনার মনে রাখতে হবে। গায়ের জোর যদি আপনি ন্যায়ের জন্য করেন আপনাকে মানুষ সাধুবাদ জানাবে। গায়ের জোর যদি আপনি অন্যায়ের জন্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্যয় করেন মানুষ কিন্তু আপনাকে সাধুবাদ জানাবে না। তখন মানুষ আপনাকে বলবে আপনি উগ্রপন্থা অবলম্বন করছেন।
‘কাজেই মনে রাখতে হবে আপনার কথা বলার অধিকার আছে। কিন্তু কথা শোনারও আপনার মানসিকতা থাকতে হবে। তা যদি না হয় তাহলে এই দেশে গণতন্ত্র হবে না। আর গণতন্ত্র যদি না হয় তাহলে মানবাধিকার থাকবে না। আর এই গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার যদি করতে হয় এবং আনতে হয় তাহলে জনগণকে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে।’