৩০ দিন কারাবাসে পদ হারাতে হবে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীকে: ভারতের পার্লামেন্টে নতুন বিল

0

নতুন একটি সংবিধান সংশোধন বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এই বিল অনুযায়ী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যদি কোনো গুরুতর অভিযোগে গ্রেপ্তার বা আটক হয়ে ৩০ দিন কারাগারে থাকেন, তাহলে তারা পদে থাকতে পারবেন না। তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের পদ হারাবেন। এ জন্য তাদের দোষী সাব্যস্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।

বুধবার (২০ আগস্ট) ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পার্লামেন্টে পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহ। সেই সঙ্গে পেশ করা হয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকার (সংশোধনী) বিল, জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল। বিল উপস্থাপিত হতেই সেগুলোকে ‘বিপজ্জনক ও অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে সংসদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিরোধীরা। অস্থিরতার মধ্যেই বিতর্কে জড়ায় ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীরা।

বিরোধী দলগুলো মনে করছে, এই বিল কার্যকর হলে কেন্দ্র সরকার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগে তাদের কারাগারে পাঠাতে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদচ্যুত করতে পারবে। ফলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত নেতৃত্বকে বিচার ছাড়াই সরিয়ে দেওয়া যাবে, যা ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোর সম্পূর্ণ বিরোধী। সে কারণেই লোকসভায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিলের কাগজ ছিঁড়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে ছুড়ে মারা হয়।

অমিত শাহের দাবি, বর্তমানে এমন কোনো আইন নেই, যেখানে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে নেতানেত্রীদের তাদের পদ থেকে অপসারণ করা যেতে পারে। এই ত্রুটিগুলো দূর করতেই নতুন এই তিনটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গুরুতর ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। সংবিধানের ১৩০তম সংশোধনীর কথা উল্লেখ করে নতুন বিলে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কোনো মন্ত্রী যদি গ্রেপ্তার এবং একটানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন, ৩১তম দিনে তাঁকে হয় পদত্যাগ করতে হবে, নয়তো পদ থেকে অপসারণ করা হবে।

বিলে গুরুতর অপরাধ বলতে কী ধরনের ফৌজদারি অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে অনুমান করা হচ্ছে, যে অপরাধে অন্তত পাঁচ বছর বা তার বেশি কারাবাস হতে পারে, এখানে তেমন মামলার কথাই বলা হচ্ছে। খুন থেকে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে ধরা হতে পারে।

এই বিল নিয়ে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘আমি একে সম্পূর্ণরূপে স্বৈরাচারী এবং অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ বলে মনে করি। এটিকে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দেওয়া আসলে জনগণের চোখে ধুলো দেওয়া। কালকেই যদি কোনো বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে তাঁকে ৩০ দিনের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে কি তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদ হারাবেন? এটা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর বিরুদ্ধে।’ বিরোধী দলগুলো এই বিলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। আরএসপির সাংসদ এন কে প্রেমচন্দ্রন বলেন, ‘এই বিলের উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট– বিজেপি বিরোধী দলগুলোর সরকার ভেঙে দিতে চাইছে।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.