বাজার কারসাজি বন্ধ হবে কী

0

পুঁজিবাজারে বর্তমানে মেয়াদি-বেমেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে মেয়াদি ৩৭টি এবং বেমেয়াদি ৫৪টি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে রয়েছে আরো ৫২টি। এর মধ্যে ব্যাংক ৩০টি ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২২টি। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড মিলে রয়েছে ১৪৩টি প্রতিষ্ঠান। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে পরপর তিন বছর পাঁচ শতাংশ হারে নগদে লভ্যাংশ না দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গঠিত তহবিল থেকে বিনিয়োগ করা যাবে না। অপরদিকে নিট অ্যাসেট ভ্যালু অভিহিত মূল্যের নিচে থাকবে ওইসব মিউচ্যুয়াল ফান্ডেও বিনিয়োগ করা যাবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল ব্যবহার করে। পাশাপাশি ব্যাংকসহ কোনো কোম্পানির যদি একাধারে তিন বছর ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিলেও ওইসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা যাবে না। আবার যেসব কোম্পানির শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৭০ শতাংশের বেশি থাকবে, অর্থাৎ উদ্যোক্তাদের হাতে ৩০ শতাংশের কম থাকবে ওইসব কোম্পানিতেও বিনিয়োগ করা যাবে না বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত তহবিল ব্যবহার করে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এত সব নিরাপত্তা বলয় থাকার পরও বাজার কারসাজি বন্ধ হবে কী, এমন প্রশ্ন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার নিয়ে অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। অতিতে বাজার কারসাজির সাথে যারাই জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, বা কারসাজির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই বিনিয়োগকারীদের সামনে। এ কারণেই হাজারো নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টির পরও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনেকটা আস্থাহীনতায় ভোগেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। বাজারমুখী হতে তাই নানা বাধাবিপত্তি সামনে আসে বিনিয়োগকারীদের।

বাজার কারসাজির হয় নানাভাবে। অতিতে দেখা গেছে, যেসব কোম্পানির বেশি সংখ্যক শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকে, ওইসব কোম্পানির উদ্যোক্তা অনেক সময় বাজার কারসাজির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠে, পুঁজিবাজারে কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তারা রয়েছেন, যারা কারসাজির মাধ্যমে কমমূল্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে নেন। আবার কারসাজির মাধ্যমে মূল্য বাড়িয়ে আবার ওই কোম্পানির শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবেই কিছু অসাধু উদ্যোক্তা বাজার কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে নিজেদের পকেট ভারী করেন।

পুঁজিবাজারে তারল্যপ্রবাহ বাড়াতে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে, ওই সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ তহবিল ব্যবহার করে বাজার কারসাজি বন্ধের বিধান রাখা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি থেকে একটি বিধান রয়েছে, এ ক্যাটাগরির শেয়ারের জন্য উদ্যোক্তাদের কাছে ন্যূনতম শেয়ার অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। অর্থাৎ, ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকলে ওই কোম্পানি ভালো কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাজার কারসাজি বন্ধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ তহবিল ব্যবহার করে উদ্যোক্তাদের ৩০ শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে এমন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ না করার বিধান রাখা হয়েছে। অপর দিকে, কোনো কোম্পানি ১০ শতাংশের কম নগদে বা বোনাস লভ্যাংশ দিলে ওই কোম্পানি এ ক্যাটাগরির কোম্পানি হতে পারে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে কোনো একটি নতুন কোম্পানি এসে এক বছর পর ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করে। পরের বছর দেখা গেলো, লোকসান দেখিয়ে কোনো লভ্যাংশই দিলো না। অথবা ন্যূনতম একটি লভ্যাংশ ঘোষণা করা হলো। মৌলভিত্তি শেয়ারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারেও এমন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানি পরপর তিন বছর ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে না পারলে, বিশেষ তহবিল ব্যবহার করে আলোচ্য কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগ করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এর ফলে পুঁজিবাজারে অসাধু উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারীদের বাজার কারসাজি কমে যাবে। ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হতে সহায়ক হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মূলধন হারিয়ে পথে বসার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে তারল্য সুবিধা ও নীতিসহায়তা দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে পুথক দু’টি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সার্কুলার দুটিতে প্রতিটি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত তারল্য সুবিধা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এ ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে পারবে। এ তহবিল থেকে পুঁজিবাজারে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করবে, ওই বিনিয়োগ বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ধরনের বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকবে।

প্রথম সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর (২০১৮ সংশোধিত) ১২১ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত পন্থায় প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে পুঁজিবাজারে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকে পাঁচ বছরের জন্য একই আইনের ২৬(ক) ধারায় বর্ণিত পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ হিসাবায়নের আওতা-বহির্ভূত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আলোচ্য পরিমাণ বিনিয়োগ ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩৮-এর প্রথম তফসিলের অধীন আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতির নির্দেশনার ৪(খ) ক্রমিকে বর্ণিত বছর শেষে বাজারভিত্তিক পুনর্মূল্যায়ন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য বিষয়বস্তুর পরিপালন হতেও পাঁচ বছরের জন্য অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

দি¦তীয় সার্কুলারে ব্যাংকগুলোর তহবিল গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০০ কোটি টাকার তহবিল থেকে পাঁচ বছরের জন্য অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলো তারা নিজেরা, অথবা তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান যেমন- মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের জন্য ব্যাংকগুলো নিজস্ব উৎস থেকে, অথবা তাদের হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে অর্থ সংগ্রহ, অথবা প্রথমে নিজ উৎস থেকে তহবিল গঠন করে পরে রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকার তহবিলের সংস্থান করতে পারবে। তবে, এ ২০০ কোটি টাকা পাঁচ বছরের জন্য ব্যাংকগুলোর ধারণকৃত শেয়ারের নির্ধারিত সীমা, অর্থাৎ ২৫ শতাংশের আওতামুক্ত থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ধার নিলে রেপোর সর্বোচ্চ সুদহার হবে পাঁচ শতাংশ। ৯০ দিন পরপর এ তহবিলের মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এর মাধ্যমে বর্তমান কার্যত ৫৭টি ব্যাংক সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে পারবে। পুঁজিবাজারে টাকার সমস্যা অনেকাংশেই কেটে যাবে ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com