স্বৈরাচারী হাসিনাকে উৎখাত করে ইকোনমিস্টের বর্ষসেরা বাংলাদেশ
২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নির্বাচন করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। বর্ষসেরা দেশের তালিকা সংবলিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেরা ধনী, সবচেয়ে সুখী বা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ স্থানের অধিকারী এমন সব বিবেচনায় নয়; বরং গত ১২ মাসে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে, সেই বিচারে সেরা দেশ নির্বাচন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করেছে দেশটির ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের জন্য।
ইকোনমিস্টের ২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশের চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে পাঁচটি দেশ। এসব দেশের মধ্যে শীর্ষ বা এক নম্বরে আছে বাংলাদেশ, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিরিয়া। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পোল্যান্ড। দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদদাতাদের মধ্যে ‘বিতর্কের’ মাধ্যমে বেছে নেয়া হয় দেশগুলোকে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, আমাদের এবারের বিজয়ী বাংলাদেশ, যারা এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুৎ করা হয়, যিনি সাড়ে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ১৫ বছর ধরে শাসন করছিলেন। দেশের স্বাধীনতার হিরোর এক কন্যা হিসেবে তিনি একসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি দমন শুরু করেন, নির্বাচনে কারচুপি করেন, বিরোধীদের কারাগারে পাঠান এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার শাসনামলে বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের সময় প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দুর্নীতিগ্রস্ত। ইসলামী চরমপন্থাও একটি হুমকি। তবে এখন পর্যন্ত তাদের পরিবর্তন আশাব্যঞ্জক। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেখানে রয়েছে একটি অস্থায়ী সরকার, যা ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এই সরকার শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।
তবে বর্তমান বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের সামনের পথ ‘মসৃণ নয়’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে এই সরকারকে ভারতের সাথে সম্পর্ক ঠিক করতে হবে এবং কবে নাগাদ নির্বাচন আয়োজন করা হবে, তা নির্ধারণ করতে হবে। এর আগে নিশ্চিত করতে হবে যে দেশটির আদালত নিরপেক্ষভাবে চলছে এবং বিরোধী দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার সময় দেয়া হয়েছে। এর কোনোটিই সহজ হবে না। তবে একজন স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং আরো উদার সরকার গঠনের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য আমাদের এ বছরের সেরা দেশ বাংলাদেশ।
সম্প্রতি বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা সিরিয়া এ বছরের রানারআপ নির্বাচিত হয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য আর্জেন্টিনা, খারাপ সরকারের বিপক্ষে গিয়ে নতুন সরকার গঠনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড এই চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পায়।
২০২৩ সালের বিজয়ী ছিল গ্রিস। দেশটি দীর্ঘ আর্থিক সঙ্কট থেকে নিজেদের টেনে তোলায় এবং একটি সংযত মধ্যপন্থী সরকার পুনর্নির্বাচিত করায় সেরা দেশ নির্বাচিত হয়। এর আগের বছরগুলোর বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছে কলম্বিয়া (গৃহযুদ্ধ অবসানের জন্য), ইউক্রেন (রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিরোধের জন্য) এবং মালাউই (গণতন্ত্রায়ণের জন্য)।