আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যে পরিমাণ অর্থ চুরি হয়েছে, তা দেশের প্রায় দেড় বছরের পুরো আয়ের সমান। এ সাগরচুরি করতে গিয়ে সব সরকারি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দীন।
সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি আমরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছি। তবে সেটা সাধারণ ক্রেতার জন্য কষ্টসাধ্য হলেও বাস্তবতার জন্য দরকার ছিল। এটা না করলে বাজারে ব্যাপক সংকট তৈরি হতো, ঘাটতি বেড়ে যেত। যে কারণে এখন আমরা অন্য কোনো পণ্যের দাম কমিয়ে সেটা সমন্বয়ের চিন্তা করছি।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ইআরএফ মিলনায়তনে ‘ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেখ বশিরউদ্দীন বলেন, শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে বিগত ১৫ বছরে যে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচারের কথা বলা হয়েছে, এটা করেছেন ওই সরকারের গুটিকয়েক মানুষ। এই টাকাটা আমাদের দেশের সব স্তরের মানুষের দেড় বছরের পুরো আয়ের সমান। এতে যেসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে, সেগুলো এখন ঠিকমতো কার্যক্রম করতে পারছে না। এগুলো সংস্কার দরকার।
তিনি বলেন, এ চুরির জন্য কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ধ্বংস করা হয়েছে। যে কারণে বড় একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানগুলো যে তথ্য সরবরাহ করে সেগুলো অসামঞ্জস্য। ফলে উৎপাদন বা চাহিদার ওইসব তথ্য দিয়ে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে যখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, তখন সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, কৃষি শিল্প দেশের একটা ইকোসিস্টেম তৈরি করে। যা খুব গুরুত্বপূর্ণ এমন কৃষিপ্রধান দেশের জন্য। এটি দেশের সাপ্লাই চেইনে বড় ভূমিকা রাখে, যা এখন বিঘ্নিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে সরবরাহ ও ঘাটতির বিপরীতে যে জোগান দরকার সেটা ঠিক রাখা। যে কারণে সম্প্রতি আমরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছি। তবে সেটা সাধারণ ক্রেতার জন্য কষ্টসাধ্য হলেও বাস্তবতার জন্য দরকার ছিল। এটা না করলে বাজারে ব্যাপক সংকট তৈরি হতো, ঘাটতি বেড়ে যেত। যে কারণে এখন আমরা অন্য কোনো পণ্যের দাম কমিয়ে সেটা সমন্বয়ের চিন্তা করছি।
আগামী রমজানে পণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন, রজমানে খাদ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থেকেও নিম্নগামী থাকবে। খেজুর, ছোলা, ডালসহ এ সময় প্রয়োজনীয় সব পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে বলে আশা করছি। সে প্রস্তুতি আমাদের আছে।
আলু নিয়ে কিছু ব্যর্থতা রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এটা মেনে নিয়ে আমরা আগামী বছরের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। উৎপাদন বাড়ানো ও বিকল্প বাজার তৈরির জন্য কাজ করছি।
সেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এ সরকার আমদানি উদারীকরণ করেছে। তারপরেও এখন ভারত থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যে সাময়িক সমস্যা হয়েছে। সেটা সমাধানে কাজ চলছে।
ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী
বাজারের সিন্ডিকেট প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এখনো বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ে কথা হচ্ছে। তেল-চিনির বাজারে মুষ্টিমেয় কয়েকজন উৎপাদক বা আমদানিকারক রয়েছেন, তারা এটা করছেন। এরমধ্যে সর্ববৃহৎ যে সরবরাহকারী, উনি দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। যিনি বাজারের একটা বৃহৎ অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। তারপরও পালিয়ে যাওয়ার কারণে যে সরবরাহে ঘাটতি হয়েছে ওই তুলনায় কিন্তু বাজারে প্রভাবটা টের পায়নি ভোক্তারা। কারণ আমরা দিনরাত পরিশ্রম করছি সরবরাহ ঠিক রাখতে।
টিসিবির বিপণন ব্যবস্থা নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আগামী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে টিসিবির কার্যক্রম, এর ডিলার ও সুবিধাভোগীদের তালিকার সংষ্কার করা হবে। আমি নিজেই কয়েকটি জায়গায় পরিদর্শন করবো।
তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানকে (টিসিবি) বছরে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়, যার মধ্যে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি। অথচ এই প্রতিষ্ঠানে সারাদেশে মাত্র ১৪২ জন জনবল। এত টাকা এ সামান্য জনবল কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে- এটা হাস্যকর।
উপদেষ্টা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের (টিসিবির) এক কোটি সুবিধাভোগীর কার্ড বিতরণ এবং ডিলার নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। এসব নিজেই সংস্কার করতে চাই, যাতে সুবিধাভোগীদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হয়। পাশাপাশি দেশের গুটিকয়েক আমদানিকারণ থেকে না নিয়ে কীভাবে সরাসরি বিদেশ থেকে টিসিবির পণ্য আমদানি করা যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার পণ্যের দাম বেঁধে দিতে চায় না। আমরা এমন একটা ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে চাই, যাতে সব পণ্যের সরবরাহ ভালো পর্যায়ে যায়। বাজারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পণ্যের সঠিক দাম নির্ধারণ হয়। সেজন্য আমরা প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করছি।