আব্দুস সোবহানকে তিলে তিলে হত্যা করেছে ক্ষমতাসীনরা
কথিত যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা, অসত্য, ভিত্তিহীন, বায়ুবীয় ও ভুয়া অভিযোগে দীর্ঘ ৭ বছর ক্ষমতাসীনদের কারাগারে মানসিক টর্চারের শিকার হয়ে ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির ও পাবনা-৫ আসনের সাবেক পাঁচবারের সংসদ সদস্য মাওলানা আবদুস সুবহান।
মাওলানা আব্দুস সোবহান শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিশিষ্ট একজন আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ। এরপর তার আরেকটি বড় পরিচয় ছিল তিনি ছিলেন পাবনার গণমানুষের নেতা ও উন্নয়নের রূপকার। তিনি একাধারে গণমানুষের ভোটে ৫বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দেখা গেছে, সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে বিভিন্ন সময়ে জামায়াত এমপির সংখ্যা কম-বেশি হয়েছে। কিন্তু, মাওলানা সোবহান এতই জনপ্রিয় ছিলেন যে তার আসনে সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। কেউই তাকে হারাতে পারেনি। মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, স্কুল, কলেজসহ তিনি বহু সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। যার কারণে পাবনার রাজনীতিতে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন।
কিন্তু, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা প্রথমেই জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূলের এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নামে। শেখ হাসিনার সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হন জামায়াতের নায়েবে আমির ও পাবনার গণমানুষের নেতা মাওলানা আব্দুস সোবহান।
বর্ষীয়ান এই নেতাকে শুধু প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে কথিত যুদ্ধাপরাধের বায়ুবীয় অভিযোগে আটক করে বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী। সকল প্রকার আইন প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে বানানো ও সাজানো সাক্ষী দিয়ে ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নিরপরাধ মাওলানা সোবহানকে শেখ হাসিনার নির্দেশে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নামের আওয়ামী ট্রাইব্যুনাল।
এরপর থেকে শেখ হাসিনার চার দেয়ালের ভেতরই অসুস্থ অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করতে থাকেন মাওলানা আব্দুস সোবহান। এমনকি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়ও বর্ষীয়ান এই রাজনীতিককে ভাল চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়নি।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল, গত বছরের ২২ জুলাই কারাগারের বাথরুমে পড়ে গুরুতর আহত হন বিশিষ্ট এই আলেমে দীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ মাওলানা সোবহান। বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষ জানার পরও রহস্যজনক কারণে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়নি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক বার বলার পরও কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। পরে আদালতের নির্দেশে শেখ হাসিনার প্রশাসন তাকে হাসপাতালে আনতে বাধ্য হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনার সময়ও তার সঙ্গে চরম অমানবিক আচরণ করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। এমন একজন আলেমেদীনকে হাসপাতালের বেডে হাতে ডান্ডাবেরি পরিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার এই আচরণই প্রমাণ করে যে, আসলে যুদ্ধাপরাধ হলো একটি ইস্যু। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মিটানোর জন্যই মূলত শেখ হাসিনা জামায়াতের নিরপরাধ নেতাদের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর ও নির্মম আচরণ করেছে। শেখ হাসিনার এই অমানবিক আচরণ ও মানসিক টর্চারের শিকার হয়েই মূলত মাওলানা আব্দুস সোবহান দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
মাওলানা আব্দুস সোবহানের এই মৃত্যুকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক মৃত্যু বলা যায় না। কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ কারাবন্দী করে শেখ হাসিনা মাওলানা সোবহানের ওপর ক্রমান্বয়ে মানসিক টর্চার করে আসছিল। মানসিক নির্যাতনই তার মৃত্যুর প্রধান কারণ। মানসিক নির্যাতন করেই শেখ হাসিনা মাওলানা সোবহানকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা জামায়াত নেতা মাওলানা সোবহানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।