মিথ্যা বয়ান ও উন্নয়নের আচ্ছন্নতায় কর্তৃত্ববাদী শাসক তৈরি হয়: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী শাসক ভিন্নমত দমন করে। সব কিছু নিজের কর্তৃত্বে রাখতে চায়। এমনকি গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী সমাজকে নিজেদের কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করে। মিথ্যা বয়ান ও উন্নয়নের আচ্ছন্নতায় কর্তৃত্ববাদী শাসক তৈরি হয়।
সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের (বঙ্গোপসাগরীয় সংলাপ) এক অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, তিনটি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে কর্তৃত্ববাদী শাসক তৈরি হয়। প্রথমত, মিথ্যা বয়ান; দ্বিতীয়ত, ভয়ের পরিবেশ এবং তৃতীয়ত, উন্নয়নের আচ্ছন্নতা। এই তিনটিই হলো কর্তৃত্ববাদী শাসকের মূল উপাদান।
তাঁর মতে, মিথ্যা শুরু হয় তথ্যের বিচ্যুতি দিয়ে। যেমন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের ফোলানো-ফাঁপানো সংখ্যা দেখানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় জিডিপি ও প্রবৃদ্ধিতে একই অবস্থা দেখানো হয়। এ ছাড়া কর্তৃত্ববাদী সরকার নিজেদের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে। যেখানে আপনি নিজের সামাজিক অবস্থান হারাবেন, নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলবেন, নিজের নিরাপত্তা হুমকিতে থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি কিছু বলেন, তাহলে আপনাকে তুলে নেওয়া হবে, আপনার আত্মীয়স্বজন আপনাকে খুঁজে পাবেন না। আমরা বাংলাদেশে আয়নাঘরের কথা শুনেছি।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসকদের কিছু উন্নয়ন দেখাতে হয়। এটি উন্নয়নের আচ্ছন্নতা। উন্নয়নের সুফল সব শ্রেণির মানুষের কাছে যায় না। তবে কর্তৃত্ববাদী শাসক অলিগার্ক তৈরি করে। রাজনীতিবিদরা মনে করেন, তাঁরা অলিগার্কদের সৃষ্টি করেছেন। একটা সময় দেখা যায়, অলিগার্করা শাসকদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির সমস্যা হলো, উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় না। বৈষম্য বাড়ে। দিন শেষে বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ দেওয়া যায় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সরকারি অর্থ দেওয়া যায় না। ঠিক এটাই ঘটেছে বাংলাদেশে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ায় দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হয়, যা বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কেন সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে এত কিছু হলো? পর্যাপ্ত বেসরকারি বিনিয়োগ না হওয়ায় অর্থনীতি টেকসই হয়নি। ফলে বেসরকারি খাত কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি পার্টির ক্যাডারে পরিণত হয়ে গেছে।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মিশ্র অভিজ্ঞতা আছে। আরব বসন্ত-পরবর্তী পরিস্থিতি দেখেছি। আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং কিছু ক্ষেত্রে সাবসাহারা দেশগুলোয় সফল গণতন্ত্রে উত্তরণ দেখেছি।