জুমা আদায়ে অলসতার জন্য নবিজির (সা.) সতর্কবার্তা
মুসলমানদের জন্য জুমার দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। তাই যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনানে ইবনে মাজা)
জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো জুমার নামাজ। পবিত্র কোরআনে জুমার দিন জুমার আজান হয়ে গেলে দুনিয়াবি কাজকর্ম ছেড়ে দ্রুত মসজিদে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। (সুরা জুমা: ৯)
বিভিন্ন হাদিসে জুমার নামাজে যথাযথভাবে অংশগ্রহণের অপরিসীম সওয়াব বর্ণিত হয়েছে। একইসাথে গাফিলতি বা অলসতার কারণে জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়ার ভয়াবহ পরিণতির কথাও বলা হয়েছে। আবুল জা’দ জুমায়রি (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি অলসতা করে ধারাবাহিকভাবে তিনটি জুমার জামাতে অনুপস্থিত থাকে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। (সুনানে নাসাঈ) অর্থাৎ সেই অন্তর হেদায়াত পাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ও আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তারা উভয়ে আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার মিম্বরের সিড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, যারা জুমুআর সালাত ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবেন এবং তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, ইচ্ছাকৃত তিনটি জুমা ছেড়ে দিলে তার নাম মুনাফিকদের তালিকায় লিখিত হয়। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ওজর ছাড়া তিনটি জুমা ছেড়ে দেয়, তার নাম মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে লিখিত হয়ে যায়। (তাবরানি)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল। (সহিহ মুসলিম)
জুমার দিন জুমা ছেড়ে দেওয়া কত গুরুতর ও ভয়াবহ পাপ তা বোঝার জন্য ওপরে উল্লিখিত একটি হাদিসই যথেষ্ট।
উত্তমরূপে জুমার নামাজ আদায়ের ফজিলত বর্ণনা করে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামাজ আদায় করে, ইমাম যখন খুতবার জন্য বের হন তখন চুপ থাকে, তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি)
আল্লাহর আমাদের সবাইকে জুমার দিন উত্তমরূপে জুমার নামাজ আদায়ের তওফিক দিন!