রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও আ.লীগ নিষিদ্ধে আল্টিমেটাম ছাত্র অধিকার পরিষদের
আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ, রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিনের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ ও ছাত্রলীগের জঙ্গি স্টাইলে মিছিলকারীদের গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টা এবং রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন নেতারা। এসময় তারা বেশি কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের দাবিগুলো হলো
১. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মধুর ক্যান্টিনে জঙ্গি স্টাইলে মুখোশ পরে মিছিলধারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
২. চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় যারা অস্ত্রসহ শোডাউন দিচ্ছে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে আইন উপদেষ্টাকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
৩. আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ এবং ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
৪. স্বৈরাচারের দোসর অমলাদের অপসারণ করতে হবে এবং দেশপ্রেমিক আমলাদের নিয়োগ দিতে হবে। প্রয়োজন হলে নিয়ম ভেঙে তাদের পদায়ন করতে হবে।
৫. ছাত্র-জনতার দাবি মেনে নিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ।
৬. সব ছাত্রসংগঠন মিলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য গঠনের আহ্বান।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ আগে সরাসরি সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো এখন তারা মুখ ঢেকে গোপনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই এই ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সংগঠন যারা ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে এতদিন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল তাদের আজীবন নিষিদ্ধ করা হোক।
ঢাবি আহ্বায়ক সানাউল্লাহ হক বলেন, আমরা ভেবেছিলাম ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে অন্যরা ভালো হয়ে যাবে, তাদের হুঁশ ফিরে আসবে। কিন্তু আমরা দেখছি তারা ভালো হওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, শেখ হাসিনা কখনো দেশে ফিরতে পারবে না। কখনো ফিরলেও তাকে ছাত্রসমাজ আইনের হাতে সোপর্দ করবে।
তিনি বলেন, চুপ্পু সাহেব আওয়ামী লীগকে আবার ফিরিয়ে আনতে চক্রান্ত করে যাচ্ছেন। আমরা অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করছি। এসময় তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান।
ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্রলীগ আজকে মুখোশ পরে জঙ্গি স্টাইলে মিছিল করেছে। এর ফলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও মুখোশধারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। উপদেষ্টাদের বলতে চাই, আপনারা আওয়ামী দোসরদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে আপনারা দায়িত্ব ছেড়ে দেন। শেখ হাসিনাও দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। আমরা তাকে হটিয়েছি।
উপদেষ্টাদের মন্ত্রণালয় বণ্টনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা একজন কয়েকটা মন্ত্রণালয় নিজেদের কাছে রেখেছেন। ফলে কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। আপনারা দ্রুত মন্ত্রণালয় বণ্টন করে দিন। এতে দেশের সব কাজে গতিশীলতা আসবে।
আমলাদের দ্রুত অপসারণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা সব ব্যর্থতার দায় আমলাদের দিয়ে যাচ্ছেন। এই আমলারা তো স্বৈরাচারেরই দোসর ছিল। তারা এখনো জনগণের জন্য কাজ করছে না। তারা স্বৈরাচারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাহলে কেন আমলাদের সমূলে উৎখাত করা হচ্ছে না?
সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন সম্ভব না জানিয়ে তিনি বলেন, যারা গণহত্যা করেছে ও তাদের দোসরদের রাজনীতি এদেশে হবে না। আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে বাংলাদেশে ছাত্রসমাজ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। এখানে কোনো সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন সম্ভব না। এসময় তিনি বিরোধী সব রাজনৈতিক ও ছাত্রসংগঠনের কাছে প্রশ্ন করেন, আপনারা কি খুনি হাসিনার সঙ্গে একই পার্লামেন্টে বসতে চান?
রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করলে ছাত্র-জনতা বঙ্গভবনে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির ওপর কারও আস্থা বা বিশ্বাস নেই। ওপেন ভোট হলেও ছাত্র-জনতার তার বিপক্ষে মতামত দেবে। তাই শাহাবুদ্দিন সাহেবকে এই পদে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যদি তিনি পদত্যাগ না করেন তাহলে আমরা বঙ্গভবনের দিকে মিছিল নিয়ে যাবো। কোনো কথা শোনা বা মানা হবে না। এসময় তিনি, আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখা সবাইকে নিয়ে একটি রাজনৈতিক সরকার গঠনের আহ্বান জানান।
ঢাবিতে ছাত্রলীগকে কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না— এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমরা উপাচার্য স্যারকে বলেছিলাম আপনি ঢাবিতে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু এখনো আপনি কেন তা পারছেন না? উপদেষ্টা মহোদয়রা আপনারা কীসের ভয় পাচ্ছেন? আপনারা কি ভারতের ‘র’ কে ভয় পাচ্ছেন? আপনাদের ভয় নেই। প্রয়োজন হলে আমরা পুনরায় রক্ত দেবো। তবুও অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করুন।