গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা আবার যে স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি, সেটিকে হারাতে চাই না: হাফিজ
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা আবার যে স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি, সেটিকে হেলায় হারাতে চাই না জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, আমরা একটা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে চাই। আমরা কেউ পার্শ্ববর্তী দেশের গোলাম হয়ে থাকতে চাই না।
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ১৭ বছর ধরে এমন এক স্বৈরাচার শাসক আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছিল ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সেই স্বৈরাচার ভারতে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, একাত্তরে জাতির যারা বড় নেতা যারা ছিলেন, তারা গর্তে বা পার্শ্ববর্তী দেশে লুকিয়ে ছিলেন। স্বাধীনতাকামী মানুষ সেদিন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ কখনো কাউকে কৃতিত্ব দিতে জানে না।
সোমবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচারি শক্তি ভারতে বসে নতুন করে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে ভয়ঙ্কর গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নাকি পাওয়া যাচ্ছে না, কারও কাছে নাকি নেই তার পদত্যাগপত্র। এর মধ্য দিয়ে একশ্রেণির মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, শেখ হাসিনা এখনো বৈধ প্রধানমন্ত্রী। এরচেয়ে বড় মিথ্যাচার আর হতে পারে না।
‘শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার। তিনি যে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাকে অন্য দেশে পাচার করছে সেই রাষ্ট্র। এরপর পদত্যাগপত্রের কি প্রয়োজন আছে’- প্রশ্ন রাখেন বিএনপির এ নেতা।
একাত্তরের রণাঙ্গণের এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ব্যালটের রাজনীতি ছাড়া আওয়ামী লীগের মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষণার কোনো মানসিকতাও ছিল না। ২৭ মার্চ আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকেছিল। তাজউদ্দীন আহমদ বারবার স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি। স্বাধীনতা ঘোষণা করলে বিচ্ছিন্নতাবাদী হবেন! পাকিস্তান সরকারের বিচারের মুখোমুখি হবেন- এমন কথা বলেছিলেন শেখ মুজিব।
তিনি বলেন, শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন মেজর জেনারেল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তার নেতৃত্বে জনতা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এরপর ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস মুছে ফেলে।
স্বৈরাচার চলে গেলেও তার টিমের রাষ্ট্রপতি এখনো বহাল তবিয়তে আছেন মন্তব্য করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো জানে না, কোনোভাবে বাংলাদেশের মানুষের জনজীবনে দুর্যোগ নেমে এলে বা টালমাটাল হলে, এই ব্যক্তি আবার শেখ হাসিনার বন্দনায় নেমে পড়বেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, ১৭ বছর ধরে নির্যাতন ও জেলজুলুমের শিকার হয়েছেন, তাদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। দেখেবেন, রাতে যারা মিছিল করে ‘বারবার দরকার শেখ হাসিনা সরকার’, তারা আর বের হওয়ার সাহস পাবে না।
‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীতে অনেক দুর্বল লোক আছে, আওয়ামী প্রীতির মানুষও আছে, এদের সরিয়ে দিন। শুধু পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা মানুষ দিয়ে দেশ পরিচালনা করা যায় না, এরা মানুষের সঙ্গে কখনো মেশেনি। মানুষের জন্য কখনো কাজ করেনি। এরা ক্ষমতা ভোগ করতে এসেছে। একটি সুন্দর সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে আবার ট্র্যাকে নিয়ে আসুন। বাংলাদেশ লাইনচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।’
হাফিজ বলেন, ইউনূস এদেশের কৃতি সন্তান, তাকে সম্মান করি। বিএনপি ও জনতার তার প্রতি সমর্থন আছে। সংস্কারের জন্য বেশিদিন সময় নেওয়া যাবে না। নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার হলেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সব বিষয় সংস্কার করবে।
গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে যত মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা চাই না এই সরকার ব্যর্থ হোক। এই সরকার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র সফলকাম হয়ে যাবে। আমরা কারও গোলাম হতে চাই না, আমরা সিকিম হতে চাই না। আমরা অবশ্যই চাইবো, ড. ইউনূসের সরকার সফল হোক।
বাংলাদেশ বিরাট ষড়যন্ত্রের মধ্যে নিমজ্জিত মন্তব্য করে হাফিজ বলেন, এদেশের ঐক্য ও স্বাধীনতা বিনষ্ট করতে, মানুষের জীবনে আবার দুর্যোগ নামাতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তার প্রমাণ, জনধিকৃত ও বিতাড়িত ব্যক্তিরা ভারতে বসে দেশ ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এ ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।
আনুপাতিক নির্বাচন চাওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের সংবিধান ৭১ ও ৭২ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আজ পর্যন্ত কনস্টিটিউশন ভিত্তিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া রয়েছে। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কোনটি হবে। কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। জনগণের মত ও অধিকারকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। বিএনপি মনে করে কনস্টিটিউশন ভিত্তিক যে নির্বাচন প্রক্রিয়া তা অব্যাহত থাকবে। ৩১ দফায় বলা আছে আমরা কী ধরনের সংস্কার চাই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এ আলোচনা সভায় আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।