জনগণ নির্বাচনী সংস্কার চায় যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়: বদিউল আলম
আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, এটিকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন মন্তব্য করে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড.বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, জনগণ নির্বাচনী সংস্কার চায় যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ এটি গুরুত্বপূর্ণ৷ আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, এটিকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে নাগরিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক একটি জাতীয় জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন৷
ড.বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো কারিগরি কিছু সুপারিশ করা৷ আমি যেই কমিশনের সঙ্গে যুক্ত সেই কমিশনের কাজ হবে কীভাবে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা যায়৷ তার কিছু টেকনিক্যাল সলিউশন আমাদের ও বাইরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবং জনগণের সঙ্গে বা বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে কি কি আইন পরিবর্তন করা দরকার। একই সঙ্গে নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত আছে তাদের কি কি পরিবর্তন দরকার।
সাংবিধানিক কি কি সংস্কার দরকার এগুলো সম্পর্কে আমরা সুপারিশ দিতে পারি৷ আমরা আশা করছি আমাদের সুপারিশ পাওয়ার পর সরকার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে একটা ঐকমত্যে পৌঁছার চেষ্টা করবে৷ এবং একটি রোডম্যাপ সৃষ্টি হবে ও নির্বাচনের সময়কাল নির্ধারিত হবে৷
তিনি আরও বলেন, একটা বিষয় সুস্পষ্টভাবে মানুষের উপলব্ধিতে ছিল সেটি হলো বিচার৷ যারা এত বছর থেকে সব অন্যায় করেছে, যারা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে, যারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে, আর্থিক অপরাধ করেছে, নির্বাচনী অপরাধ করেছে তাদের বিচারের কথা অনেকে সুস্পষ্টভাবে বলছেন৷ অনেকের মনেও ছিল৷
অনুষ্ঠানে নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ৫৩ শতাংশ ভোটার মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তারও কম সময় হওয়া উচিত৷
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে নাগরিকদের প্রত্যাশা শীর্ষক এ জাতীয় জরিপ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি বছরের গত ৯ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর দেশের আটটি বিভাগের ১৭টি জেলায় মোট ১৮৬৯ জনের ওপর এ জরিপ করা হয়৷ এটি জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সর্বপ্রথম সরাসরি পরিচালিত একটি জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ৷ এ জরিপের উত্তরদাতাদের বৃহত্তম অংশ (৬৩ শতাংশ) মধ্যবয়সী যাদের বয়স ২৮ থেকে ৫০ বছর৷ ২২ শতাংশ জেনারেশন জেড (১৮-২৭) বছর এবং ১৪ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের ওপরে৷ এছাড়া জরিপের উত্তরদাতাদের ৫৪ শতাংশ শহর অঞ্চল এবং ৪৬ শতাংশ গ্রামীণ অঞ্চলের৷
জরিপের ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, উত্তর দাদাদের প্রায় ৫৩ শতাংশ মনে করেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তার কম হওয়া উচিত৷ যেখানে ৪৭ শতাংশ মনে করেন এ অন্তবর্তীকালীন সরকারকে তিন বছর বা তার বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে হবে৷
এ জরিপে উত্তরদাতাদের ৪৬ শতাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনিশ্চিত আর ৫৪ শতাংশ মূলধারার রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ এছাড়া ৯৬ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করাকে সমর্থন করে৷ ৪৬ শতাংশ বিশ্বাস করে সংবিধানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন প্রয়োজন৷ এবং ১৬ শতাংশ সম্পূর্ণ নতুন সংবিধানের পক্ষে তাদের মত জানিয়েছেন৷
গবেষণার তথ্যে বলা হয়, নাগরিকের অন্তর্ভুক্ত ও সরকারের বর্তমান অবস্থান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ বিশেষ করে আগস্ট সেপ্টেম্বর তাদের বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন৷ পুলিশ, শিক্ষা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে৷