প্রেসব্রিফিং —

0

সোমবার, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০, রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয়কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এর বক্তব্য।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

পৃথিবীর ইতিহাসে কোন স্বৈরাচারের পরিণতি শুভ হয়নি। জনগণের ওপর জোর-জবরদস্তি করে ক্ষমতা দখলে রেখে কিছু দিনের জন্য যা ইচ্ছা করা যায়। কিন্তু তা চিরস্থায়ী নয়। স্বৈরশাসকদের করুণ দশা চোখের সামনে দেখে এবং জেনেও বর্তমান স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার অবৈধ অনির্বাচিত নিশিরাতের সরকারের বোধোদয় হচ্ছে না। এ মূহুর্তে পুলিশ ও সন্ত্রাসী শক্তির ব্যবহার ছাড়া শেখ হাসিনার ঝুড়িতে আর কিছু নেই। তারা শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, ভোটাধিকার, স্বাধীনতার মূল চেতনা গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। দেশের মানুষকে তারা মানুষ মনে করেনা। বিকট অমানবিকতা, পাকাপোক্ত নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা আর বন্দুকের নলই হচ্ছে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার উৎস। পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন, আইন-আদালতকে নিজেদের দলীয় অস্ত্র বানিয়ে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্নকরণের কর্মসূচি করেছে এই মিডনাইট সরকার। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় বিনা অপরাধে দুই বছরের বেশী হলো কারাবন্দী রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। জেলের ভেতর হত্যার চেষ্টা চলছে। ৭৫ বছর বয়সী দেশনেত্রীর অবস্থা চরম খারাপ। এখনি মুক্তি দিয়ে দ্রুত উন্নত সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে আমরা তাঁর জীবনহানীর আশংকা করছি।

বন্ধুরা,
কয়েকদিন আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছেন-তিনি বিশে^র এক নম্বর অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীর এই কথা চিরকুটে লিখে রাখলাম। হাসতে হাসতে হার্টফেল করলে অর্থমন্ত্রী দায়ী থাকবেন। এই বক্তব্য অজ্ঞাতপ্রসুত নয়, রাজনৈতিক ধান্দাবাজপ্রসুত। অর্থমন্ত্রী এই বক্তব্যের পরের দিনই আবার বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। বন্ধুরা, মূলত: স্বস্বীকৃত ১নং অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল সাহেব দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছেন। আসলে গণতন্ত্র ধ্বংসকারী মন্ত্রীদের মুখে এধরণের অবান্তর বক্তব্যই মানায়।

এখন প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে দেখবেন দুই-আড়াই কোটি নয়, শত শত, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে আপনাদের দলের লোকজন। বিদেশে বেগম পল্লী, সেকেন্ড হোম বানাচ্ছে। ঘরে ঘরে টাকশাল বানাচ্ছে। বিদেশে পাচার করছে। দেশের অর্থনীতি ফোকলা করে ফেলেছেন আপনারা। সংসদে দাঁড়িয়ে আপনাদের অর্থমন্ত্রী স্বীকার করছেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। গত দু’দিন আগে টিআইবি সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছে-বাংলাদেশে দুই লাখ অবৈধ বিদেশী কাজ করে। যেখানে দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বেকার সেখানে বাংলাদেশে অবৈধ বিদেশীদের কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। সরকার বলছে-দেশে একজনও বেকার থাকবে না। কিন্তু দেশের বেকারদের কথা চিন্তা মাথায় না নিয়ে অবৈধভাবে দেশে আসা বিদেশীদের কাজ করার সুযোগ দিয়ে বেকার তৈরীর কারখানা তৈরী করেছে সরকার।

সরকার চলছে ২ লক্ষ কোটি ঋণের টাকায়। আপনাদের দলের ছিঁচকে নেতাও এখন অবৈধ শত কোটি টাকার মালিক। তাদের শাস্তি হয় না। মামলা হলে দায়মুক্তি দেয় দুদক। আর যে নেত্রী একটি টাকাও তসরুপ করেননি, তাঁকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতার শিকার বানিয়ে সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে হত্যার জন্য জেলে রাখা হয়েছে। তিনি এদেশের ১৭ কোটি মানুষের কাছে নিকট সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। সেজন্য আওয়ামী লীগ প্রধান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা হিংসা-প্রতিহিংসার আগুনে জ¦লছেন। গণমানুষের প্রাণাধিক প্রিয় দেশনেত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র বন্ধ করে মুক্তি দিন। অন্যথায় আপনাদের করুণ পরিণতির দিন ঘনিয়ে আসছে।

সচেতন সুপ্রিয় বন্ধুরা,
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নামে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের বিজয় দেখানো হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী পান্ডারা দিনে-দুপুরে দস্যুবৃত্তির মাধ্যমে কারচুপির যতরকমের কৌশল আছে সব প্রয়োগ করেছে এই ভোটে। এই সরকার বাদে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও নগরবাসী এই কারচুপির ভোটের ফল প্রত্যাখান করেছে। ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচনের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেছেন। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি’র পক্ষ থেকে সিটি নির্বাচনে জালিয়াতি, ভোট কারচুপির সকল প্রামান্য তথ্য উপাত্ত জাতির সামনে তুলে ধরে ফলাফল বাতিলের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু চোরে শোনে না ধর্মের কাহিনী। গণবিচ্ছিন্ন ক্ষমতাসীন দল সেই আহবান প্রত্যাখান করেছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘পূণ: নির্বাচনের দাবি মামা বাড়ির আবদার। সিটি নির্বাচনে জালিয়াতি, ভোট কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। কারচুপি বা ভোট জালিয়াতি হলে ভোট আরো বেশি কাষ্ট হতো।’

আমি মি. ওবায়দুল কাদেরকে বলবো-আপনি ভোট কারচুপির এমনই মেকানিজম করেছিলেন যে আপনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আপনার সুস্থতা কামনা করি, কিন্তু জালিয়াতির মেশিন ইভিএম দিয়ে ভোটারদের যেভাবে সর্ষে ফুল দেখিয়েছেন সেজন্য আপনাকে নিয়ে ভোটাররা কি ভাবছেন সেটি একটু বোঝার চেষ্টা করবেন। বারবার অসুস্থ হওয়ার পরেও আপনি মিথ্যার ফেরিওয়ালাই থেকে যাচ্ছেন। সৃষ্টিকর্তার কথা বিবেচনা করে কমপক্ষে কিছুটা সত্য কথা বলার চেষ্টা করুন। ঢাকা সিটি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও পুণ:নির্বাচনের দাবী প্রতিটি মানুষের। ভোট ডাকাতি এখন আপনাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আপনারা এখন জনগনের চরম ঘৃনার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। জোর করে বিনা ভোটে ক্ষমতায় থেকে কিভাবে আপনারা বেহায়ার মতো অবৈধ কর্মকান্ডের পক্ষে কথা বলেন ? সুষ্ঠু ও ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে ভোট দেবার জনগনের অধিকার ফিরিয়ে দিন।

সুহৃদ বন্ধুরা,
আমরা সরকারের পা চাটা গোলাম এই নির্বাচন কমিশনকে বলবো-দেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আওয়ামী লীগের অঘোষিত নেতা সিইসি নুরুল হুদার অধীনে এ পর্যন্ত যতোগুলো নির্বাচন হয়েছে সেগুলোতে শুধু একতরফা, ভোট লুট, রাতের আঁধারে নৌকা মার্কায় সিল মারার উৎসব হয়েছে। যোগ হয়েছে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য ও তান্ডব। এসব দেশের মানুষ কোনো দিন বিস্মৃত হবে না। আমরা নির্লজ্জ সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নে জড়িত সিইসিসহ কতিপয় কমিশনারকে তাড়িয়ে দেয়ার সংগ্রাম শুরু করতে হবে গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে।

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন-জিয়া, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মাটির সন্তান নয়। কিন্তু বন্ধুরা, জিয়া এবং খালেদা জিয়াই সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। কেননা, জিয়াউর রহমানই দেশের ক্রান্তিকালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে রক্ষা করেছিলেন। বিপন্ন গণতন্ত্রকে উদ্ধারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি এখনও হারানো গণতন্ত্র এবং মানুষের বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, কোন স্বৈরাচারের নিকট তিনি মাথানত করেননি বলেই তিনি আপোষহীন নেত্রী আখ্যায় আখ্যায়িত হয়েছেন। তিনি সবসময় দেশের মানুষের পাশেই আছেন, অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর চোখ রাঙানীতে ভীত হয়ে বিদেশ পালিয়ে যাননি। কিন্তু দেশের মানুষের পাশে না থেকে কে বিদেশ পালিয়েছে কিংবা কার সন্তান কোথায় বিয়ে করেছেন বা কিভাবে আছেন তা দেশবাসী ভালভাবেই জানে। সুতরাং বাংলাদেশের মাটির সন্তান কে বা কারা তা দেশবাসীর অজানা নয়।

বন্ধুরা,
গতরাত ১টায় জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ শিপকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com