‘স্যাটেলাইটের ছদ্মবেশে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করছে তেহরান’

0

উন্নত প্রযুক্তির নতুন একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে ইরান। রোববার তেহরানের দক্ষিণ-পূর্বে মরুভূমি এলাকা সেমনানের ইমাম খোমেনি স্পেস সেন্টার থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়।

‘জাফর’ নামের নতুন স্যাটেলাইটটি শান্তিপূর্ণ কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে বলে দাবি তেহরানের। তবে ওয়াশিংটনের অভিযোগ, স্যাটেলাইটের ছদ্মবেশে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।

এটির মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা আড়াল করা যাবে বলেও অভিযোগ তুলেছে ওয়াশিংটন। এর আগে এটাকে তেহরানের ‘উসকানিমূলক’ কর্মকাণ্ড বলেও হুশিয়ারি দেয় মার্কিন কর্মকর্তারা।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে নতুন মডেলের মাঝারি পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছে ইরানের রিভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)।

নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি অত্যাধুনিক স্যাটেলাইটটি শনিবার মহাকাশে উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও শেষ সময়ে এসে স্থগিত করা হয়। খুঁটিনাটি প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ শেষে ফের উৎক্ষেপণের ঘোষণা দেন ইরানি কর্মকর্তারা।

রোববার এক টুইটার বার্তায় ইরানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ আজারি জাহরামি বলেন, ‘জাফর স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের জন্য সময় গণনা শুরু হয়েছে। মহান আল্লাহর নামে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটা সেমনান থেকে ৭,৪০০ কিলোমিটার গতিতে উৎক্ষেপণ করা হবে।’

তিনি বলেন, ইরানের নয়া স্যাটেলাইট ‘জাফার’ পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছার পর সর্বপ্রথম জেনারেল কাসেম সোলাইমানির ছবি সম্প্রচার করবে। একইসঙ্গে ইরানিদের চারশ’টি অডিও বার্তা সম্প্রচারিত হবে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।

ইরান সাধারণত ইসলামী বিপ্লব দিবস উপলক্ষে ১ ফেব্রুয়ারিতে তার প্রযুক্তিগত অর্জনের বিষয়ে ঘোষণা দেয়। কিন্তু এ বছর উল্লেখযোগ্য ঘোষণা এসেছে আগেভাগেই।

গত মঙ্গলবার ইরান বলেছে, জাফর নামের একটি স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠাতে চায়। আর এর জন্য তারা ব্যবহার করবে স্যাটেলাইট বহনকারী নিজস্ব রকেট সিমর্ঘ।

এর পরপরই প্রতিক্রিয়ায় গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত ইরান নিয়েছে তা স্পষ্টভাবেই পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়ে ইরানের ওপর থাকা জাতিসংঘের প্রস্তাবের লঙ্ঘন।

এর দু’দিন পর শনিবার ইরানের তরফ থেকে নতুন আরেকটি উৎক্ষেপণের কথা ঘোষণা দেয়া হয়।

মার্কিন অভিযোগের জবাবে ইরান বলেছে, তেহরান নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রই পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ইরান বহু বছর ধরে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ধারণা, একই প্রযুক্তি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতেও কাজে লাগানো সম্ভব। গত নভেম্বর মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্রবিষয়ক গবেষণার সূত্রে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইরানই সম্পূর্ণ নিজেদের প্রযুক্তিতে কার্যকর স্যাটেলাইট লঞ্চার তৈরি করছে। ২০০৯ সালে প্রথম উমিদ (আশা) নামে একটি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠায় দেশটি। পরের বছরই ২০১০ সালে মহাকাশে প্রাণীবাহী যান পাঠায় তেহরান।

২০১৫ সালে পাঠায় ফজর (ঊষা) নামের আরেকটি স্যাটেলাইট। এই স্যাটেলাইটটি উঁচুমানের ছবি ধারণ করে পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে। গত বছরের জানুয়ারিতে কারিগরি ত্রুটিতে ব্যর্থ হয় ইরানের তৈরি পায়াম স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ।

নতুন স্যাটেলাইট জাফর আকার ও ওজনের দিক থেকে পায়াম স্যাটেলাইটের মতো হলেও এতে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়েছে। ৯০ কেজি ওজনের এই কৃত্রিম উপগ্রহে রয়েছে চারটি কালার ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা ভূপৃষ্ঠের ছবি ধারণ করে তা পৃথিবীতে পাঠাবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com