মানব পাচার নির্মূলে ন্যূনতম মান পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার

0

মানব পাচার নির্মূলে ন্যূনতম মান পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। তবে এ বিষয়ে সরকারের যথেষ্ট চেষ্টা ছিল। আগের বছরের তুলনায় কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখা গেলেও বাংলাদেশের অবস্থান থেকে গেছে সেই দ্বিতীয় সারিতেই।

গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার-বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত, বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করার মতো কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে পাচারের শিকারদের চিহ্নিত করার নির্দেশিকা গ্রহণ করেছে এবং অনেক ভুক্তভোগীকে চিহ্নিতও করেছে। বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর আইনও সংস্কার করেছে সরকার, যাতে পুরো প্রক্রিয়া আরও ভালোভাবে নজরদারিতে রাখা সম্ভব হয়; জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। প্রথমবারের মতো সরকার পাচারের শিকারদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে তহবিল গঠন করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তথাপি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে ন্যূনতম মান অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। যদিও সরকার আইন প্রয়োগ কার্যক্রম জোরদার করেছে; এটি নারী পাচার ও জোরপূর্বক শিশুশ্রমের মতো অভ্যন্তরীণ পাচার-সংশ্লিষ্ট অপরাধ চিহ্নিত করতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি। সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শোষণ-সংশ্লিষ্ট মামলায় যথাযথ তদন্ত ও বিচার করতে পারেনি। নতুন কোনো মানব পাচারবিরোধী ট্রাইব্যুনালও স্থাপন করেনি সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের সুরক্ষার চেষ্টা অপর্যাপ্ত থেকে গেছে। তাদের জন্য যেসব আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোতে পাচারের শিকারদের বিশেষ সেবা দেওয়া হচ্ছে না। তা ছাড়া রাজধানী ঢাকার বাইরে ভুক্তভোগীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রও কম। সরকার নানা ফি আরোপ করায় অভিবাসী শ্রমিকরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে, যা তাদের মানব পাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ ছাড়া অধিকাংশ মানব পাচারকারীকে আর্থিক জরিমানা করেন আদালত; তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হয় না। এর মাধ্যমে সরকারের মানব পাচারবিরোধী প্রচেষ্টা দুর্বল বলে গণ্য হয়। সেই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের জন্ম দেয়।

এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কর্মকর্তাসহ মানব পাচারে জড়িতদের তদন্ত ও দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। তাদের কারাদণ্ডসহ যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর লোকজন পাচারের শিকার হচ্ছে কিনা, তা চিহ্নিতকরণের চেষ্টা বাড়াতে হবে। মানব পাচারবিরোধী ট্রাইব্যুনালের জনবল বাড়াতে হবে, যাতে এসব মামলা যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারে। পাচারের শিকারদের সুরক্ষা প্রাপ্যতা ও মান বাড়াতে হবে; তাদের বিশেষ সেবা দিতে হবে।

এদিকে মানব পাচারবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘টিআইপি হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলাদেশের আল-আমিন নয়ন। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মানব পাচার-বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।

আল-আমিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক। তিনি বিদেশফেরত ও পাচারের শিকারদের সহায়তায় কাজ করেন। তিনি ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় এ বছর আর কেউ পাননি এ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। আল-আমিনের পাশাপাশি কেনিয়া, মালি, ফিলিপাইন, সার্বিয়া, স্পেন, সুরিনাম, বলিভিয়া ও ইরাকের একজন করে মোট ৯ জন ২০২৪ সালে টিআইপি হিরোর স্বীকৃতি পেয়েছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com