ঘুষ-অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এলাকার মানুষের মুখে মুখে, তবুও হতে চান উপজেলা চেয়ারম্যান
২১ মে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শেরপুরের নকলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন পাঁচজন। তাদের একজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ। তার বিরুদ্ধে ঘুষ-অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এলাকার মানুষের মুখে মুখে।
২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে গামছা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জিন্নাহ। ওই নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির জাহেদ আলী চৌধুরী। জিন্নাহ আবার আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০১৫ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি নকলা পৌর এলাকায় জমি কিনে দুটি ভবন করেছেন, ময়মনসিংহে কয়েক কোটি টাকার জমি কিনেছেন।
গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জিন্নাহর বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি একেকজনের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। ওই নির্বাচনে পুরো উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়। উপজেলায় ১৬১ জন মুক্তিযোদ্ধা জীবিত থাকলেও তার ভাতিজা অমুক্তিযোদ্ধা বুলবুলকে প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক করেছেন বলে অভিযোগ আছে। বুলবুল এলাকায় মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত। তিনি মাদকসহ র্যাবের হাতে কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
জিন্নাহ সম্প্রতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি করার সময়ও কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কমিটি নিয়ে ক্রমাগত দুর্নীতির কারণে গত বছরের শেষের দিকে চর-অষ্টধর ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন জিন্নাহ।
২০২৩ সালে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নকলা উপজেলা অফিসের মাঠকর্মী (ভলান্টিয়ার) পদে ২২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই নিয়োগ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ। মাঠকর্মী পদে নিয়োগ পাওয়া এক নারীর স্বামী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে নিয়োগ পেতে জিন্নাহকে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। বেশিরভাগ লোককে ওই সময় নিয়োগ পেতে ৩-৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, ‘নিয়োগের নামে আমি কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছি এ কথা কেউ বলতে পারবে না। আর বুলবুল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। এ হিসেবে তাকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। আমি ব্যবসা করে সম্পদ অর্জন করেছি, অবৈধভাবে নয়।’
নকলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান চারজনসহ ১৪ প্রার্থী আছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ বোরহান উদ্দিন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুল আলম সোহাগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সারোয়ার আলম তালুকদার ও বিএনপির থেকে বহিষ্কৃত নেতা মোকশেদুল হক শিবলু।
বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মোকসেদুল ইসলাম শিবলু ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলায় ১৪ বছর জেল খেটেছেন। গত বছর তিনি কারাগার থেকে বের হন। শিবলুর বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি ডাকাতির মামলা রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলে গুলিবর্ষণ, বেগম মতিয়া চৌধুরীর শাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার কারণে সর্ব মহলে নিন্দিত। শিবলু ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। এ ব্যাপারে শিবলুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ আছে, আরেক প্রার্থী শাহ মুহাম্মদ বোরহান উদ্দিন হাসপাতালে নিয়োগের কথা বলে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। উপজেলা পরিষদে পাঁচ বছরে শিক্ষাবৃত্তির ৩০-৩৫ লাখ টাকা তার পকেটে। পিপড়ি কান্দির মজিবরের ছেলেকে চাকরির প্রলোভনে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে তিনি।
শাহ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন এলাকায় ইয়াবা সেবনকারী এবং ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। তার মাদক সংশ্লিষ্টতা ওপেন সিক্রেট। বোরহানের ধর্ষণের ঘটনাটি পুরো জেলায় বহুল আলোচিত। বোরহান কতৃক ধর্ষিতা মারাত্মক আহত হলে দ্রুত ঘটনাটি ছড়িয়ে পরে। মাটিকাটার নারী শ্রমিককে বেধড়ক মারধর করে সর্বমহলে ব্যাপক নিন্দিত হয় বোরহান। এছাড়াও নৈতিক স্খলন জনিত তার অনেক ঘটনা রয়েছে। কয়েক কোটি টাকার জমি দখল করে বোরহান তার মধ্যে নকলা মুরগি হাটি সংলগ্ন দামি জায়গাটি দখল করে মার্কেট নির্মাণ, গড়েড় গাও মোড়ের লেলিলদের বাপ চাচাদের মামলায় জড়িয়ে তাদের জমি আত্মসাৎ করেন, বাইপাস রোডে আরো একটি বড় জমি দুই পক্ষের বিবাদ লাগিয়ে নিজে দখল করে নেয়। পাচকাহনিয়া মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্য করতে গিয়ে সভাপতির পদ হারান বোরহান।