সিটি নির্বাচনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা অগ্রহণযোগ্য

0

ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)। এ হামলাকে অগ্রহণযোগ্য বলে বিবৃতি দিয়েছে আরএসএফ। এতে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের খবর সংগ্রহের সময় ১০ জন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচার করার ও দল থেকে তাদের বহিষ্কার করার দাবি জানিয়েছে আরএসএফ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১লা ফেব্রুয়ারি ওই হামলা হয় ১০ জন সাংবাদিকের ওপর। তার মধ্যে দু’জনকে মারাত্মক ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। তার একজন আগামী নিউজ ওয়েবসাইটের সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান সুমন। তিনি মোহাম্মদপুরের জাফরাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রের ছবি তুলতে গিয়েছিলেন।ওইদিন সকাল ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। এই ছবি ধারণ করার সময় তার ওপর হামলা চালানো হয় এবং মাথায় ভয়াবহ জখম করা হয়। তার মাথা রক্তে ভেসে যায়। তবে তিনি হামলাকারীদের হাত থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।

আরএসএফ তার বিবৃতিতে আরো বলেছে, প্রায় একই সময়ে প্রেস বাংলা এজেন্সির সাংবাদিক জিহাদ ইকবালের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তিনি নিকুঞ্জ জানে আলম স্কুলে ভোটের চিত্র ধারণ করছিলেন। তিনিও মারাত্মক জখম নিয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে কি কারণে তার ওপর হামলা হয়েছে তা পরিষ্কার জানা যায় নি। আরএসএফের এশিয়া-প্রশান্ত ডেস্কের প্রধান ডানিয়েল বাস্টার্ড বলেন, দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের বিরদ্ধে নতুন করে এই ভয়াবহ সহিংসতা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এই পর্যায়ক্রমিক হামলার জন্য যারা দায়ী তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে আমরা পুলিশ মহাপরিদর্শক জাভেদ পাটোয়ারির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে হামলাকারীদের। তাই এসব হামলাকারীকে অবশ্যই দল থেকে বহিষ্কার করার উচিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। কারণ, এসব নেতাকর্মী গণতন্ত্রে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীন ভূমিকা প্রত্যাখ্যান করে।

ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক মাহবুব মমতাজি ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাংবাদিক নূরুল আমিনকে ঢাকা দক্ষিণে মাদ্রাসা ফরিদাবাদ ভোটকেন্দ্রে ঘেরাও করে আওয়ামী লীগের ছাত্র বিষয়ক সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যরা। মোবাইলে তোলা ছবি ডিলিট বা মুছে না দেয়া পর্যন্ত ওই সাংবাদিকদের তারা আটকে রাখে। একই গ্রুপের নেতাকর্মীরা গেন্ডারিয়ায় দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি আল ফাতাহ মামুনকে মারধর করে। অল্প উত্তরে পরিবর্তন নিউজ ওয়েবসাইটের ফটোগ্রাফার ওসমান গণির ওপর হামলা হয়। এতে তিনি আহত হন। কামরুন্নেছা গার্লস স্কুলে ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ছবি তোলার সময় এ ঘটনা ঘটে। প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে মাদারটেক স্কুলের একটি ভোটকেন্দ্রে ছবি তোলার সময় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আলহাজ জাহাঙ্গীর হোসেনের সমর্থকরা হামলা চালায় দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান ফটোসাংবাদিক শেখ হাসানের ওপর। তারা শেখ হাসানকে তার ক্যামেরার মেমোরি কার্ড থেকে তোলা ছবি মুছে দিতে বাধ্য করে। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন ডেইলি স্টারের সাংবাদিক ফয়সল আহমেদ। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। পরে ধারণ করা ছবি ও ভিডিও মুছে মোবাইল ফোন ফেরত দেয় তাকে।

এর থেকে অল্প পূর্ব দিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মাদারটেক আবদুল আজিজ স্কুল ভোটকেন্দ্রে প্রহার করে দৈনিক নয়াদিগন্তের সাংবাদিক শামসুল ইসলাম ও দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক ফারুক হোসেনকে। আরএসএফ বিবৃতিতে আরো বলেছে, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, চলাকালীন ও পরে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা ডকুমেন্ট হিসেবে ধারণ করেছে তারা। ২০১৯ সালে আরএসএফের বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫০তম। ২০১৮ সালের চেয়ে চার দফা অবনমন হয়েছে বাংলাদেশের।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com