রাজপথে ফের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ঘোষণা আ.লীগ-বিএনপির

0

তিন মাস পর ফের রাজপথে মুখোমুখি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দেশের রাজনীতির প্রধান এই দুই দল পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে। আগামী শুক্রবার বিএনপি সমাবেশ এবং আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের মাধ্যমে রাজধানীতে আবারও বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দ্বিতীয়বারের মতো এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি বিএনপির ঢাকাসহ মহানগরগুলোতে কালো পতাকা মিছিলের বিপরীতে রাজধানীতে সমাবেশ করেছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপি অবশ্য আগামী ১ মে মহান আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে ঢাকায় আরেকটি শোডাউনের পরিকল্পনার কথা জানালেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি।

দীর্ঘদিন বিরতির পর বিএনপি আগামী শুক্রবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ডেকেছে। দলের নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ব্যানারে এ সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেবেন।

অন্যদিকে একই দিন বিকেল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে এ সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেবেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে। ওই দিন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনসহ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি মহাসমাবেশের কর্মসূচি দেয়। বিপরীতে আওয়ামী লীগও সমাবেশ করে। তবে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ওই মহাসমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা হয়। সেদিন পুলিশের অ্যাকশনে বিএনপির মহাসমাবেশও পণ্ড হয়ে যায়।

এরপর থেকে কয়েক দফায় হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েও ব্যাপক ধরপাকড়, মামলা ও নেতাকর্মীর গ্রেপ্তারের কারণে বিএনপি সেভাবে মাঠে নামতে পারেনি। অবশ্য ভোটের আগে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে মাসখানেক বিএনপি ও তার মিত্ররা লিফলেট বিতরণ করেছে। এমনকি নির্বাচনের পরও কিছুদিন বিএনপির লিফলেট কর্মসূচি অব্যাহত থাকলেও কোনো পাল্টা কর্মসূচিতে যায়নি সরকারি দল।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০২২ সালের জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও এর মিত্ররা। ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকায় মহাসমাবেশের দিন থেকে আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে শান্তি সমাবেশ শুরু করে। গত বছরের ১৫ জুলাই বিএনপি ও তার মিত্রদের সরকার পতনের এক দফা আন্দালন শুরু হলে নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ দখলে রাখতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো সারাদেশে শান্তি সমাবেশের কর্মসূচিও জোরালো করে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, আন্দোলন ও নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ বিএনপি ও তার জোট এখনও সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এ জন্যই ৭ জানুয়ারির অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সারাবিশ্ব থেকে এই নির্বাচন ও নতুন সরকারের প্রতি সমর্থন জানানোর পরও বিএনপি ২৫ জানুয়ারি কালো পতাকা মিছিল করেছে। এরপর আবার আগামী শুক্রবার ফের রাজধানীতে সমাবেশ ডেকে নতুন করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে। তবে দেশের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি নস্যাতে বিএনপির কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হবে না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেছেন, বিএনপি আবারও কর্মসূচির নামে দেশে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করতে চাইছে। এটাকে কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। তারা মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে চাইলে সরকারি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

নেতাকর্মীর মনোবল চাঙ্গা করতে চায় বিএনপি

শুক্রবারের সমাবেশের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীকে চাঙ্গা করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। এ ছাড়া ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে শ্রমিক দলের ব্যানারে শ্রমিকদের বড় শোডাউন করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এই দুই কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে তারা। ঘরোয়া বৈঠক ও মতবিনিময় সভাসহ নানা প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলছে। সমাবেশ ছাড়াও তৃণমূল নেতাকর্মীকে আবার সক্রিয় করতে লিফলেট বিতরণসহ কর্মিসভার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। আজকালের মধ্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। এরপর ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মাসজুড়ে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে।

দলটির নেতারা বলছেন, গত বছরের ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পণ্ড করে দেওয়ার পর এই দুই সমাবেশের মধ্য দিয়ে আবারও রাজপথে ফিরতে চাইছেন তারা। ওই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সারাদেশে প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেওয়া হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী চলে যান আত্মগোপনে। টানা আন্দোলন ও নির্বাচন শেষে নেতাকর্মীর কারামুক্তির বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে। ফলে নির্বাচন শেষে আন্দোলন কর্মসূচি থেকে পিছুটান দেন তারা। তবে এখন আবারও রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, একটি ভুয়া ও ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে। তাই তারা সব সময় আতঙ্কিত। বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করছে। এই সরকারের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে এবং ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com