‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ’
আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। আক্ষরিক অর্থে, রাজনীতির মাঠে ছিল না কোনো প্রতিযোগিতা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গণগ্রেপ্তারের কারণে বিরোধীরা ব্যস্ত ছিল আদালতপাড়ায়। ফলে ছিল না আন্দোলন-সংগ্রামের স্বাধীনতা। রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগি চুক্তি এবং আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও দলের সঙ্গে যুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভোট হওয়ায় ভোটারদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন নিয়ে এমন তথ্যই ওঠে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মূল্যায়নে। ইউরোপীয় কমিশনের ওয়েবসাইটে ৩৩ পৃষ্ঠার পূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
গত জুলাই মাসে সার্বিক পরিবেশ নিয়ে ইইউ প্রাক-নির্বাচনী মিশন বাংলাদেশ সফরে প্রায় শতাধিক বৈঠক করে। বৈঠকগুলো থেকে ইইউ সিদ্ধান্ত নেয়, বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তবে নির্বাচন নিয়ে চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে পাঠায় সংস্থাটি। নির্বাচনের আগে ও পরে এ বিশেষজ্ঞ দলটি বিভিন্ন বৈঠক ও পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার যার মধ্যে সমাবেশ, সমিতি, আন্দোলন এবং বক্তৃতা অন্তর্ভুক্ত–এগুলো প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হলেও বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা সীমাবদ্ধ ছিল। বিচারিক কার্যক্রম এবং গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগি চুক্তি এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের সঙ্গে যুক্ত ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ মধ্যে প্রতিযোগিতা ভোটারদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি। গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজও বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সহায়ক ছিল না। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের সমালোচনামূলক বিতর্কও ছিল সীমিত।
ভোট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভোট গণনা শুরু হয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রাথমিকভাবে বলেছিল, ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটের দিন ঘোষিত ভোটের হারের তুলনায় শেষ দুই ঘণ্টায় ভোটারের উপস্থিতি সামান্য বেড়েছে। স্বচ্ছতা ও শক্তিশালী নিরপেক্ষ নাগরিক সমাজের অভাব, সব দলের এজেন্ট না থাকায় ইসি ছাড়া ভোটের তথ্য যাচাইয়ের অন্য কোনো সুযোগ ছিল না।
সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। ফলে নির্বাচন একটি অত্যন্ত মেরূকৃত রাজনৈতিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তার জোট শরিকরা নির্বাচন বয়কট করায় প্রকৃত প্রতিযোগিতার অভাব ছিল। বিরোধীরা সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন পরিচালনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছিল, যা প্রত্যাখ্যান করা হয়।