রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে ভোট কেড়ে নেয়া হয়েছে

0

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় সব সংস্থা ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে জনগণের ভোট কেড়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠকের পর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন। এর আগে বিএনপির প্রতিনিধি দল ভোটকেন্দ্র দখল, এজেন্ট বের করে দেয়া, জাল ভোট দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ সংবলিত চিঠি সিইসিকে দেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ যা বলে দেশের মানুষ তা বিশ্বাস করছে না বিধায় তাদের ভোটকেন্দ্র দখল করতে হয়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে ভোট চুরির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন কমিশনকে রাষ্ট্রীয় সব সংস্থাকে ব্যবহার করে মানুষের ভোট কেড়ে নেয়া হয়েছে।

ইভিএমে ভোটগ্রহণে অনিয়ম হয়েছে দাবি করে আমীর খসরু বলেন, পুরো নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের অনাস্থা সৃষ্টির জন্য ইভিএম অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। এ নির্বাচনে সেটা প্রমাণ হয়েছে। প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে এক শতাংশ ব্যালট ইস্যু করার যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা পরে তুলে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ইভিএম আনার পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য প্রমাণ হয়েছে। চট্টগ্রাম উপনির্বাচনে ইভিএমের পাইলটিং করা হয়েছে। আর সিটি নির্বাচনে ফাইনাল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইভিএমে ভোটারদের আঙুলের ছাপ নেয়ার পর তাদের কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের মার্কায় ভোট চেপে দিয়েছে। ধর্ষণের ভয় দেখিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতেই দেয়া হয়নি। যারা ঢুকতে পেরেছে তাদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের অপমান-অপদস্থ করা হয়েছে।

আমীর খসরু বলেন, অনেক কেন্দ্রের ইভিএমের ব্যালটে ধানের শীষের প্রতীকও ছিল না। ভোটাররা প্রতীক খুঁজে পায়নি। অনেক মেশিন নষ্ট ছিল। যেসব জায়গায় মেশিন নষ্ট ছিল, সেখানে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আর যেখানে ভালো ছিল, সেখানে ১০ শতাংশও ভোট পড়েনি। এই ইভিএমের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের ভোট কেড়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে, এটা তার প্রথম পদক্ষেপ।

বিএনপির এ নেতা বলেন, নির্বাচনের নামে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। নির্বাচন চলাকালীন সকালে প্রধানমন্ত্রী একজন মেয়র প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে শুধু যে আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে তা নয়, রাজনীতিকভাবে দেশের জন্য খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার পর আর কিছু থাকে না। নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্টরা যে বার্তা পাচ্ছে, তাতে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না।

তিনি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগের শত শত বহিরাগত কর্মীরা দাঁড়িয়ে ছিল। যাদের ঢাকা শহরে থাকার কথা ছিল না, ভোটকেন্দ্রের সামনে থাকার কথা ছিল না। সারা দেশ থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীকে ঢাকায় আনা হয়েছে। ভয়ে কারও বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো অ্যাকশন নিচ্ছে না। বিএনপির দুই প্রার্থী শত শত অভিযোগ দিলেও প্রতিকার পায়নি।

নির্বাচনের ফল বিএনপি মেনে নেবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন বিএনপি মেনে নেবে কিনা তা বড় প্রশ্ন নয়। বড় প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এ নির্বাচন মানবে কিনা। কারণ বিএনপি দেশের মালিক নয়। দেশের মালিক জনগণ।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী পরপরই বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ভোটারদের মনে তারা আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি। এ জন্য ভোটকেন্দ্রে ভোটার কম ছিল।

তাবিথ আউয়ালের ৭৫ অভিযোগ : ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাবস্থায় রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে দুই দফায় ৭৫টি অভিযোগ করেন এ সিটির বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। প্রথম দফায় ৩২টি ও পরে ৪৩টি অভিযোগ করেন তিনি। তাবিথ আউয়ালের প্রতিনিধি হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এসব অভিযোগ নিয়ে আসেন তার প্রতিনিধি জুলহাস উদ্দিন।

এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম ওই প্রতিনিধির উদ্দেশে বলেন, অভিযোগ দিয়েছেন রেখে দিলাম। এখন কথা শোনার সময় নেই। অভিযোগ কি আগেই লিখে রেখেছিলেন নাকি? এর জবাবে জুলহাস উদ্দিন বলেন, আগে কেন লিখে রাখব। আমাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছে ও মারধর করেছে নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা। অনেকের মাথা ফাটিয়েছে তারা। আজ ভোট, আপনি এখন ব্যবস্থা না নিলে এমনটা হতে থাকবে। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, অভিযোগ দিয়েছেন দেখব। আগেও তো দেখেছি।

পরে জুলহাস উদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তিনি আমার কথাই শুনলেন না। এখন আর দুই-তিন ঘণ্টা সময় আছে, এখনও তিনি ব্যবস্থা না নিলে কখন নেবেন। তিনি ফোন করে খোঁজখবর নিতে পারেন, প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেবেন। অভিযোগে তাবিথ আউয়াল বিভিন্ন কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে ওইসব কেন্দ্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন। এর মধ্যে এজেন্টদের বের করে দেয়া, কেন্দ্র দখল ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com