আন্দোলন নিয়ে হার্ডলাইনে বিএনপি: ‘এক দফা’র লাগাতার কর্মসূচি আসছে

0

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে হার্ডলাইনে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এ দাবিতে আগামী সপ্তাহে দেশব্যাপী লাগাতার কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির হাইকমান্ড। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হলেই লাগাতার কর্মসূচি কঠোরভাবে পালিত হবে। এর আওতায় দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ অথবা অবরোধ ও হরতাল একই সঙ্গে পালনের কথা রয়েছে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে ইতোমধ্যে সব সাংগঠনিক জেলায় বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরা কোন কৌশলে কীভাবে মাঠে থাকবেন, এ বিষয়ে দেওয়া হয়েছে দিকনির্দেশনা।

মাঠের নেতাকর্মীদের পরিস্থিতি মূল্যায়নের পাশাপাশি গ্রেফতার এড়িয়ে কর্মসূচি সফলের জন্য বলা হয়েছে। এদিকে সমমনাদের বাইরে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে লাগাতার আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে আলোচনা চলছে।

এছাড়া সরকার পতনের দাবিতে দ্বিতীয় দফার অবরোধের পর আবারও দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। আজ বিরতি দিয়ে কাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এখনো সময় আছে আলোচনা বা সমঝোতার মাধ্যমে সংকট সমাধানের। জনগণ ও দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিকল্প নেই। সহিংসতা রোধের বিকল্প শুধু সংলাপ। কাজেই সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে তারা আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।

নয় দিন ধরে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। মাঝে বিরতি ছিল তিন দিন। বুধবার ভোর ৬টা থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, তাদের প্রধান দাবি সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, নতুন ইসি গঠন। দাবি না মেনে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন। সেক্ষেত্রে তফশিলের দিন বা এর পরদিন থেকে দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হবে। একই কর্মসূচিতে যাবে বিএনপির সমমনা দল ও জোট এবং জামায়াতে ইসলামী। কয়েকটি বাম রাজনৈতিক দল ও একটি নিবন্ধিত বড় ইসলামি দলও একই কর্মসূচিতে যেতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার ভেবেছিল ভয়ভীতি-সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিরোধী দলকে স্তব্ধ করে দেবে। কিন্তু চলমান কর্মসূচিতে দেশের মানুষ থেমে নেই। উসকানির মাধ্যমে একটি অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির দায় বিএনপির ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার সরকারি পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। আজ দেশের মানুষ ইচ্ছায়, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে।

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আগামী দিনেও চালিয়ে যাব। দেশের আপামরসাধারণ আজ জেগে উঠেছে। সরকার তাদের কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারবে না। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জয় হবেই। সরকারের প্রতি অনুরোধ হিংসাত্মক পথ থেকে সরে আসুন। শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় একটি সমঝোতায় গিয়ে সরকার থেকে সরে দাঁড়ান। একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ নিজেরাই খুলে দিন। এটা শুধু সরকারের জন্যই মঙ্গলজনক হবে না, দেশের জন্যও মঙ্গলজনক হবে।

এদিকে সরকারের কঠোর মনোভাব এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাব নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করছেন নীতিনির্ধারকরা। নেতারা মনে করেন, চলমান আন্দোলন দেশে-বিদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। হরতাল ও অবরোধ উভয় কর্মসূচিতে জনগণের সমর্থন আছে। সরকারের দমন-পীড়নের বিষয়ে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। সরকার দেশে ও দেশের বাইরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নীতিনির্ধারকদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে বিএনপিকে কঠোর কর্মসূচি নিয়েই রাজপথে থাকতে হবে।

একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, তাদের সামনে লাগাতার আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করে যতই ষড়যন্ত্র করা হোক, কোনো লাভ নেই। তফশিল ঘিরেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তফশিল ঘোষণার পর থেকে আন্দোলনে নতুন মাত্রা পাবে। এছাড়াও তাদের বিশ্বাস, খুব শিগগিরই সরকারের ওপর গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে আরও কঠিন চাপ আসবে। সেটা হলে নেতাকর্মীরা আরও চাঙা হবে।

লাগাতার কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে সমমনা দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও কথা বলছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এমনকি দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও তাদের পরাপর্শ নিচ্ছেন।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার ভাবছে বিরোধী দলকে তফশিলের ঘোষণা দিয়ে কাবু করবে। আসলে এটা একটি দুরাশামাত্র। আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের তফশিল ঘোষণার উদাহরণ অনেক দেখেছি। তফশিল ঘোষণার পর নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তিত হয়েছে, সেই উদাহরণও অনেক দেখেছি। শুধু তাই নয়, তফশিল ঘোষণার পরে যে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়েছে-সে উদাহরণও আছে। কাজেই তফশিল ঘোষণার হুমকি দিয়ে সরকার দেশের বিরোধী দল দূরে থাক, দেশের মানুষকেও কাবু করতে পারবে না। মানুষ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে নেমেছে, গণতন্ত্র আমরা অর্জন করবই। যুগান্তর

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com