যেভাবে ইয়াবার ভয়াল সাম্রাজ্য
বাংলাদেশ সীমান্তের চারদিক থেকেই ঢুকছে ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবা। সেই সঙ্গে দিন দিন বাড়ছে ফেনসিডিলও। সীমান্তে নজরদারি করা বাহিনী ও সীমান্ত জেলাগুলোর পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির কারণে এই সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচার কিছুটা কমে এলেও বাংলাদেশের অন্য সীমান্ত দিয়ে এখন ব্যাপকহারে ইয়াবা ঢুকছে দেশের ভিতরে। তারপর ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার সীমান্তে বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির ফলে ইয়াবা পাচারকারীরা তাদের রুট পরিবর্তন করছে। ইয়াবা পাচারকারীরা এখন বাংলাদেশের সিলেট, কুড়িগ্রামের রৌমারী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবা পাচার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় পুলিশ সদর দফতর থেকে সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপারদের ইয়াবা পাচার রোধে আরও সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। বিজিবির এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানের সময় ১ কোটি ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৮ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। একই সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় ৩ লাখ ৯ হাজার ৬০ পিস ইয়াবা। এই মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ৭৪৮ জনকে। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ইয়াবা জব্দ করা হয় ৫৩ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৫ পিস। একই সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় ৫ লাখ ৯ হাজার ৪২১ পিস ইয়াবা। গ্রেফতার হরা হয় ৬০৮ জনকে। গত ৯ সেপ্টেম্বর বিজিবি সদর দফতর থেকে পাঠানো এক মেইলে জানানো হয়, ওই দিন বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ভারতীয় ১৯৫ পিস ইয়াবাসহ মাসুদ রানা নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে সাত হাজার ৮০০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র্যাব। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী গত বছর বাংলাদেশের ৩২টি সীমান্ত জেলার বিভিন্ন থানায় ইয়াবা জব্দ বিষয়ে মামলা হয়েছে ৫ হাজার ২৮টি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসে মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৩০০টি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ড. এ এফ এম মাসুম রব্বানী বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে ইয়াবা পাচারের বিষয়টি গোয়েন্দাদের মাধ্যমে সদর দফতরে আসছে। অতিরিক্ত পরিচালক গোয়েন্দা মোসাদ্দেক হোসেন রেজা বলেন, সীমান্তের চারদিক দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। এই তথ্য প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় জানানো হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে তারা ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। এদিকে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক ইয়াবাসহ মাদক নিয়ে সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ২০ আগস্ট নগরীর হালিশহর জেলা পুলিশ লাইনসে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উপস্থিত ১১ জেলার এসপিদের এ নির্দেশনা দেন তিনি।