আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির’ অভিযোগ
বহুজাতিক কোম্পানি আদানি গ্রুপের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির’ অভিযোগ ওঠার পর ভারতজুড়ে প্রতিবাদ চলছে। এ উত্তাপ থেকে বাদ যায়নি দেশটির সংসদও।
বৃহস্পতিবার আদানি গ্রুপের শেয়ার কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে অভূতপূর্ব ঐক্যের নজির তৈরি হয়েছে ভারতের সংসদে। শুক্রবারও ঐক্যের নজির গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস।
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়ালের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের ঘরেই দু দফায় বৈঠক বসে ১৭ বিরোধী দল। এরপর আজ শুক্রবার সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তির সামনে বসছেন বিরোধী সাংসদেরা। তার আগে খাড়্গের ঘরে ফের বৈঠকে বসবে দলগুলি। সেই বৈঠকে অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেস উপস্থিত থাকবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তৃণমূলের দুই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও ব্রায়েন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের বিষয়ে তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, নতুন করে বৈঠকে আলোচনার কিছু নেই। যৌথ প্রতিবাদের বিষয়ে সব বিরোধী দল একমত হয়েছে।
এদিকে আদানি গ্রুপের শেয়ার কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে ভারতজুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। সোমবার আদানিদের অফিস, জীবন বিমা ও এলআইসি’র শাখার সামনে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করবে তারা।
বাণিজ্যিক বিনিয়োগ সম্পর্কিত মার্কিন পরামর্শক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত গত আট দিনে ১০ হাজার কোটি টাকা খুইয়েছে বিশ্বের সাবেক শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপ।
পরিস্থিতির নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না ঘটলে সামনের দিনগুলোতে আদানি গ্রুপের লোকসান আরও বাড়বে বলে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।
গত ২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছর ধরে আদানি গ্রুপ শেয়ার বাজারে জালিয়াতি করে যাচ্ছে। হিন্ডেনবার্গের দাবি, আদানি গ্রুপ ভুল তথ্য ও রাজনৈতিক সূত্রে প্রাপ্ত বিভিন্ন সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যমে শেয়ার বাজারকে প্রভাবিত করছে এবং এর মাধ্যমেই আদানি গ্রুপ বাজারে নিজেদের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। জাল-জালিয়াতি ও কারসাজির আশ্রয় নিয়ে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকির অভিযোগও তারা করেছে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে।
এদিকে আদানিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো। কারণ আদানি বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হলেও এই কেলেঙ্কারির কারণে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে এলআইসি এবং ব্যাংক। এছাড়াও ভারতের সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
ছোটোবেলায় স্কুল থেকে ঝরে পড়া গৌতম আদানি গত কয়েক বছর ধরেই ভারতের শীর্ষ ধনী শিল্পপতিদের একজন। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের বাসিন্দা এবং ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া থাকায় দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিও তিনি।
এই রাজনৈতিক যোগাযোগকে কাজে লাগিয়েই গত কয়েক বছরে রীতিমতো ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল আদানি গ্রুপ, এবং ৬০ বছর বয়সী গৌতম আদানি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী।
তবে হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে সে সবই এখন বিগত দিনের সোনালী ইতিহাস গৌতম আদানি ও তার মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের জন্য। কারণ শেয়ার বাজার বিশ্লেষণকারী বিভিন্ন সংস্থার বরাতে জানা গেছে, গড় হিসেবে গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত সব কোম্পানির শেয়ারের দাম গত আট দিনে কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। অনেক বিনিয়োগকারীও আদানি গ্রুপ থেকে তাদের অর্থ উঠিয়ে নিচ্ছেন; এবং এসব কারণেই আদানি গ্রুপের আর্থিক লোকসান ছুঁয়েছে ১০ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক।