পাসপোর্টবিহীন শেনজেনভুক্ত হলো ক্রোয়েশিয়া, চালু করলো ইউরো মুদ্রা
আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন বছরের সূচনা হতে যাচ্ছে। নতুন বছরের শুভক্ষণে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের প্রায় এক দশক পর ইউরো মুদ্রা চালু করছে ক্রোয়েশিয়া। পাশাপাশি ইউরোপের পাসপোর্ট-মুক্ত শেনজেন জোনভুক্তও হচ্ছে দেশটি।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি মধ্যরাতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বলকান রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়া তার নিজস্ব মুদ্রা কুনাকে বিদায় জানাবে। এর মধ্য দিয়ে ইউরোজোনের একক মুদ্রা ‘ইউরো’ ব্যবহারকারী ২০তম দেশ হবে ক্রোয়েশিয়া।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির জেরে জ্বালানি ও খাদ্যের দামের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। এমন সময় ইউরো মুদ্রা চালুর এই সিদ্ধান্ত ক্রোয়েশিয়ার অর্থনীতিকে রক্ষায় সহায়তা করবে।
শুধু তাই নয়, পাসপোর্ট-মুক্ত শেনজেন অঞ্চলের ২৭তম দেশ হবে ক্রোয়েশিয়া। শেনজেন জোন হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম এক অঞ্চল; যেখানকার ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ এর সদস্য দেশগুলোতে অবাধে চলাফেরা করতে পারেন।
তবে মুদ্রা পরিবর্তন আর শেনজেন জোনে যোগদান নিয়ে ক্রোয়েশিয়ানদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে দেশটির সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের অবসানের সিদ্ধান্তে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে কেউ কেউ মুদ্রার পরিবর্তন নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশটির ডানপন্থী বিরোধী দলগুলো বলছে, মুদ্রার পরিবর্তনে কেবল জার্মানি এবং ফ্রান্সের মতো বড় দেশগুলো উপকৃত হবে।
ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবের ৬৩ বছর বয়সী পেনশনভোগী ড্রাজেন গোলমেক বলেছেন, ‘আমরা আমাদের কুনার জন্য কান্না করবো, সবকিছুর দাম বাড়বে।’ তবে তার স্ত্রী সান্দ্রা এই মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘ইউরো বেশি মূল্যবান।’
নেভেন ব্যানিক নামের এক করণিক বলেন, ১ জানুয়ারি কিছুই পরিবর্তন হবে না। এখানে সবকিছুই দুই দশক ধরে ইউরোতে হিসেব করা হয়।
ক্রোয়েশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা ইউরোজোন এবং শেনজেনে যোগদানের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। বুধবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ প্লেনকোভিচ বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ক্রোয়েশিয়ার সাথে গভীরভাবে একীকরণের দু’টি কৌশলগত লক্ষ্য হচ্ছে ইউরো মুদ্রা চালু এবং শেনজেনে যোগদান।
‘স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা’
সাবেক যুগোস্লাভ প্রজাতন্ত্র ক্রোয়েশিয়া ১৯৯০ এর দশকে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল। পরে ২০১৩ সালে ইইউতে যোগ দেয় দেশটি। আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ইউরো চালু করলেও দেশটিতে অনেক আগে থেকেই ইউরোজোনের এই মুদ্রার ব্যাপক প্রচলন আছে।
দেশটির প্রায় ৮০ ভাগ ব্যাংকের আমানত ইউরোতে সংরক্ষণ করা হয় এবং জাগরেবের প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদাররাও ইউরোজোনের।
ক্রোয়েশিয়ানরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ যেমন— গাড়ি এবং অ্যাপার্টমেন্ট ইউরোতে মূল্যায়ন করে আসছেন। যা স্থানীয় মুদ্রার প্রতি দেশটির নাগরিকদের আস্থার অভাবকে তুলে ধরে।
ক্রোয়েশিয়ান ন্যাশনাল ব্যাংকের (এইচএনবি) কর্মকর্তা আনা স্যাবিক ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ইউরো অবশ্যই দেশে (অর্থনৈতিক) স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে আসবে। যদিও গত নভেম্বরে ক্রোয়েশিয়ার মুদ্রাস্ফীতির হার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছায়।
সীমান্তবিহীন শেনজেন অঞ্চলে ক্রোয়েশিয়ার প্রবেশ অ্যাদ্রিয়াটিক এই দেশটির প্রধান পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করে তুলবে বলে অনেকে মনে করেন। ক্রোয়েশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০ শতাংশের বেশি আসে পর্যটন শিল্প থেকে।
১ জানুয়ারি থেকে শেনজেনভুক্ত হলেও প্রযুক্তিগত সমস্যা থাকায় আগামী ২৬ মার্চ ক্রোয়েশিয়ার বিমানবন্দরে সর্বশেষ সীমান্ত যাচাই হবে।
শেনজেনভুক্ত হওয়ার পরও ক্রোয়েশিয়া তার পূর্ব সীমান্তের ইইউয়ের সদস্য নয় এমন প্রতিবেশি দেশ বসনিয়া, হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো এবং সার্বিয়ার সাথে কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জারি রাখবে।
সূত্র: এএফপি, এএফপি।