২০২৩ সালে যেমন হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসেন জো বাইডেন। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের ৪৬তম এ রাষ্ট্রপতির প্রথম দুই বছরের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে নিজ দলের বিবাদমান নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টায়। এখন পর্যন্ত সমাধান না হওয়া এ বিষয়টি, আগামী দুই বছরে আরও কঠিন হতে পারে বলে ধারণা করছে মার্কিন রাজনীতিবিদরা।
এ বছরের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। এর মাধ্যমে ২০২৩ সালে দেশটির রাজনীতি বিভক্ত সরকারব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকবে ও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত এভাবেই চলবে।
হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে চলে যাওয়ায়, ক্ষমতাসীন দল চাইলেই এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে দেশের জন্য খুব ভালো কিছু ঘটবে না বলে দাবি করছেন দেশটির অনেক সাধারণ নাগরিক।
অনেকে বলছেন, স্পিকার ও রাষ্ট্রপতির দল আলাদা হওয়াটা দেশের আইন প্রণয়নসংক্রান্ত বিষয়ের জন্য খুব একটা জরুরি ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে স্পিকারের ভূমিকা অনিয়মিত ও সমঝোতামূলক আইনপ্রণেতা থেকে অপরিহার্য আইন প্রণেতায় পরিণত হয়েছে।
বিরোদী দল থেকে স্পিকার আসার বিষয়টি যেকোনো ক্ষমতাশীল দলের জন্য চ্যালেঞ্জিং। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৮১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তৎকালীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রোল্যান্ড রিগানের সঙ্গে স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ডেমোক্র্যাট দলের টিপ ও’নিল।
ন্যান্সি পেলোসির রিপাবলিকান উত্তরসূরি কেভিন ম্যাকার্থি যে ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করবেন তা ভাবার কোনো কারণ নেই। সুতরাং সাধারণ মার্কিন নাগরিকরা যে ভয়টি পাচ্ছেন, আগামী বছর ঠিক তেমনটিই হতে চলেছে।
বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও চীনের বিষয়টি বাদ দিয়ে অন্যান্য যেকোনো বিষয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা যে একমত হবেন, তার সম্ভাবনা খুবই কম।
দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ২০২৩ সাল থেকে মার্কিন কংগ্রেসের মাধ্যমে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ একত্রিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ অথচ তুলনামূলক ছোট বিষয়গুলো এগিয়ে যাবে। কিন্তু বাকি সবকিছু বিভক্ত সরকারের অধীনে ধীরে ধীরে আগাবে। সুতরাং ২০২২ সালের পর জো বাইডেনের জন্য তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অর্জনের সুযোগ থাকবে না।
এদিকে প্রগতিশীলরা আশা করেছিলেন, বাইডেন কংগ্রেসের গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ থেকে বৃহৎ সামাজিক-কল্যাণ ও জলবায়ুর ক্ষতিরোধে ব্যাপক সাফল্য লাভ করবেন। সাফল্য তিনি কিছুটা পেয়েছেন, কিন্তু তা আশানুরূপ নয়।
জো বাইডেন হয়তো এখন নতুন আইন প্রণয়নের চেয়ে দূষণরোধ ও ব্যবসাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশি তৎপর হবেন, যাকে সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ‘বড় অবকাঠামোগত পরিবর্তন’ বলে দাবি করছেন। তবে এসব ক্ষেত্রেও বাইডেনের দল একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
দ্য ইকোনমিস্টের মতে, আগামী নির্বাচনে বেইডনে ও ট্রাম্প দুজনই অংশ নিতে চান। তবে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জো বাইডেনকে অযোগ্য বিবেচনা করা হতে পারে।
যদি তাই হয়, তাহলে ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যে উত্তরাধিকার প্রতিযোগিতা শুরু হবে।২০২০ সালের সালের প্রাথমিক নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যপন্থী ও প্রগতিশীল ধারার মধ্যে যে গভীর ফাটল দেখা দিয়েছিল, তা আরও একবার দেখা যাবে। প্রতিযোগীদের মধ্যে উত্তরাধীকার হিসেবে এগিয়ে থাকবেন বর্তামান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট