মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘে ভারতের ইউটার্নের কারণ কী?
মিয়ানমারে সহিংসতার অবসান এবং দেশটির ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিসহ সব রাজবন্দির মুক্তির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ভারত নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রস্তাবের বিষয়ে ভোটদানে বিরত ছিল।
চলতি মাসে ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করছে ভারত। পরিষদ বুধবার একটি প্রস্তাব পাস করেছে যেখানে ১২টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিয়েছে এবং তিনটি দেশ- ভারত, চীন এবং রাশিয়া- ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
গত ৭৪ বছরের মধ্যে এই প্রথম মিয়ানমার নিয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলো নিরাপত্তা পরিষদে। এর আগে ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার অর্থাৎ তৎকালীন বার্মা ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করলে নিরাপত্তা পরিষদ সাধারণ পরিষদে বার্মাকে জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার পরামর্শ দিয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে।
ভারতের যুক্তি কী?
জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা কাম্বোজ বলছেন, মিয়ানমারের জটিল এ পরিস্থিতিতে শান্ত, ধৈর্যশীল কূটনৈতিক পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলে মনে করে ভারত। এ ছাড়া সেখানে দীর্ঘ অচলাবস্থা কাটানোর আর কোনো পথে নেই।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের উচিৎ উভয় পক্ষকে আলোচনায় সহায়তা করার। আবার নিরাপত্তা পরিষদও যেন ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নেয় সেটা নিশ্চিত করাও জরুরি। গঠনমূলক ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে শান্ত ও গঠনমূলক কূটনীতির আশ্রয় নিতে হবে।
ভারত বলছে যে মিয়ানমারের অস্থিতিশীলতা প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য একটা সমস্যা হয়ে উঠতে পারে, তাই এটি গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের মতামত যেন নিরাপত্তা পরিষদ গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভুক্ত করে।
রুচিরা কাম্বোজ বলেন, এই সমস্ত উদ্বেগের কথা মাথায় রেখে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস রেখে এবং মিয়ানমারের মঙ্গলের জন্য ভারত এই ভোট প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছে।
ভারতের ইউটার্ন
এর আগে ভারত বেশিরভাগ সময়ই অং সান সু চিকে গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই সম্মেলনেও মোদি অং সান সু চিকে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়টিকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বলেছিলেন, আইন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে।
ওই সময় সু চিকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী একটি বিবৃতিতে জানান, মিয়ানমার সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে আমরা উদ্বিগ্ন। প্রতিবেশী গণতন্ত্র হিসেবে ভারত ধারাবাহিকভাবে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সমর্থন দিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে হবে। যা কিছু প্রক্রিয়াগুলোকে দুর্বল করে দেয় তা গভীর উদ্বেগের।