রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে যুক্তরাজ্যে ফিরলেন বরিস জনসন
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে লিজ ট্রাস পদত্যাগ করতেই নতুন করে শুরু হয়েছে এই পদ দখলের লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে সাবেক ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
এ উপলক্ষে যুক্তরাজ্যে ফিরেছেন বরিস। মূলত দ্বিতীয় মেয়াদে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে শনিবার (২২ অক্টোবর) দেশে ফেরেন তিনি। রোববার (২৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে লিজ ট্রাসের পদত্যাগের পর নিজের দ্রুত রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যে ফিরে এসেছেন বরিস জনসন। সম্প্রতি তিনি ছুটি কাটনোর জন্য ব্রিটেনের বাইরে গেলেও শনিবার দেশে ফিরে আসেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। মাত্র মাস দেড়েক আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। তবে তার পদত্যাগের পর এখন ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পাটির পরবর্তী নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নির্ধারণের জন্য আরেকটি নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে।
লিজ ট্রাসের স্থানে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নেতৃত্ব নির্বাচনের এই প্রতিযোগিতা এই সপ্তাহের শেষের দিকে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তাদের সোমবারের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় প্রবেশের জন্য যথেষ্ট মনোনয়ন বা সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে।
রয়টার্স বলছে, লিজ ট্রাস যখন পদত্যাগের ঘোষণা দেন তখন ক্যারিবিয়ানে ছুটি কাটাচ্ছিলেন বরিস জনসন। তবে ট্রাসের পদত্যাগের পর নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় প্রার্থী হিসেবে জনসন শামিল হবেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। যদিও জনসন এখন পর্যন্ত নিজে থেকে এ সম্পর্কে কিছু বলেননি। তবে তার ঘনিষ্টজনরা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
অবশ্য বরিস জনসন ইতোমধ্যেই কয়েক ডজন কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতার সমর্থন পেয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে কোনো প্রার্থীকে সহকর্মী টোরি এমপিদের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ জনের মনোনয়নের বা সমর্থনের প্রয়োজন হবে।
ব্রিটেনের বাণিজ্য মন্ত্রী জেমস ডুড্রিজ গত শুক্রবার জানান, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে জনসন ‘প্রস্তুত’ বলে তাকে জানিয়েছেন। এর একদিন পর শনিবার তিনি বলেন, জনসন ১০০টি মনোনয়ন বা সমর্থন পেয়েছেন।
যদিও রয়টার্সের একটি তালিকা বলছে, জনসনকে সমর্থনকারী আইনপ্রণেতাদের সংখ্যা ৪০-এর ওপরে। অন্যদিকে সাবেক ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে সমর্থনকারী টোরি আইনপ্রণেতার সংখ্যা ১১০-এর বেশি। মূলত এই সুনাকের পদত্যাগের সিদ্ধান্তই জনসনকে ব্রিটেনের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে আনতে সাহায্য করেছিল।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদপত্র সানডে টাইমস জানিয়েছে, ঋষি সুনাক এবং বরিস জনসন শনিবার রাতে দেখা করতে পারেন। তবে সেখানে কোনো পরিকল্পিত আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি পত্রিকাটি।
অবশ্য লিজ ট্রাস পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পাটির পরবর্তী নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিযোগিতায় কে নামবেন তা এখন পর্যন্ত একজন ছাড়া কেউ-ই নিশ্চিত করেনি।
রয়টার্স বলছে, এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। যদিও রয়টার্সের সমীক্ষা অনুযায়ী, মর্ডান্টের মাত্র ২২টি মনোনয়ন বা সমর্থন রয়েছে।
এদিকে ব্রিটেনে আসার সময় ফ্লাইটের কিছু যাত্রী জনসনকে তিরস্কার করেছেন বলে প্লেনে থাকা স্কাই নিউজ একজন রিপোর্টার জানিয়েছেন। পরে গাঢ় জ্যাকেট এবং ব্যাকপ্যাক পেছনে নিয়ে জনসন লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
রয়টার্স বলছে, জনসনের আরেকবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা কনজারভেটিভ পার্টির অনেকের জন্য একটি মেরুকরণের বিষয়। কারণ গত ছয় বছরে চার প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় করার পর গভীরভাবে বিভক্ত ব্রিটেনের এই ক্ষমতাসীন দলটি।