জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে সংঘটিত ‘গুম-খুনে’র নিরপেক্ষ তদন্ত চায় বিএনপি

0

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে বাংলাদেশে সংঘটিত গুম-বিচারবর্হিভূত হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গুম করা মানবতার বিরুদ্ধে একটা বড় অপরাধ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ছয় শতাধিক রাজনৈতিক নেতাকর্মী বা বিভিন্ন সিভিল সোসাইটির মানুষ ও শ্রমিক নেতাকে গুম করা হয়েছে। বেশির ভাগকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এগুলোর কোনো সদুত্তর আমরা পাইনি, গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা পায়নি। একটা লোককে রাষ্ট্র গুম করে রাখবে। কিছু জানবে না, তার সমস্ত অধিকারকে ক্ষুণ্ন করা হবে, তার পরিবারের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে—এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এই ধরনের অপরাধ অবশ্যই খুঁজে বের করা দরকার।

আজ শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব একথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার অত্যন্ত সঙ্গতভাবে বলেছেন যে, এগুলোর সুষ্ঠু স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে এবং সেই সঙ্গে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তাদের বিচার হতে হবে। তিনি কিন্তু র‌্যাবের নামও উচ্চারণ করেছেন যে, র‌্যাবের মাধ্যমে এগুলো হয়েছে বলে তাদের ইনভেস্টিগেশনে এসেছে। এ বিষয়ে আমরা বলেছি যে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে স্বাধীন ইনভেস্টিগেশন চাই।

গুম নিয়ে বিএনপির অভিযোগ বেশির ভাগই রাজনৈতিক— ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ওনারা তো একথা বলবেনই। তারা তো স্বীকার করবেন না। তবে কালকে ওনার (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্য যেটা দেখলাম, তিনি বলেছেন— জাতিসংঘের কোনো ক্ষমতা নেই এসব গুম-অপহরণ হয়ে যাওয়ার বিষয়গুলো বিচার করার। তার মানে এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, সেটা স্বীকার করছেন। আপনারা তো নিশ্চয়ই পুলিশ অফিসারদের বক্তব্যগুলো শুনেছেন, এর আগে তারা বলেছেন— অনেকে হারিয়ে যায়, অনেকে পারিবারিক কারণে লুকিয়ে থাকে, এই ধরনের কথা-বার্তা বলেছেন। কিন্তু এগুলো প্রমাণিত হয়ে গেছে, বিশেষ করে নেত্র নিউজের যে প্রতিবেদন বেরিয়েছে, সেই প্রতিবেদনে আরও বেশি প্রমাণিত হয়েছে যে, রাষ্ট্র এর সঙ্গে জড়িত, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই গুম হওয়া, অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনার সাথে জড়ানো হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার যে বিবৃতি দিয়েছেন এই বিবৃতি আমাদের এতদিনকার যে দাবি সেটাই আবারো প্রমাণিত হয়েছে। আমরা যেটা এতদিন বলে আসছি, এখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এনফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স এবং এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং চলছে। ওনার (জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার) বিবৃতিতে আছে— শর্টটার্ম ও লং টার্ম ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স হয়েছে। তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, আমাদের কর্মীরা মানে জাতিসংঘের কর্মীদের ফাইন্ডিংসগুলো হচ্ছে এভাবে গুম হয়ে গেছে, এভাবে ডিজঅ্যাপিয়ার করেছে। ওনার বিবৃতিতে প্রমাণিত হয়েছে, এসব ওনারা আমলে নিয়েছেন কিনা। এমনকি তারা এটাও বলেছে যে, এসব ঘটনা ইনভেস্টিগেশন করার জন্য নতুন একটি টিম আসবে। তারা আশা করেন যে, সরকার তাদের অনুমতি দেবে। আপনারা জানেন, এর আগে কয়েকবার হিউম্যান রাইটস কমিশন আসতে চেয়েছিল। সরকার তাদের বাধা দিয়েছে, তাদের আসতে দেয়নি। এবার তাদের আসতে দিয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ওরা জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব কিছু ভুলে গেছে। তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ হাসিল করলে চলে। রাষ্ট্রকে দখলে রাখতে একটা নতুন এলিট ক্লাস তৈরি করেছে তারা। সেই এই এলিট ক্লাসে কিছু আমলা আছে, কিছু রাজনীতিবিদ আছে, কিছু টেকনোক্রেট আছে— সব মিলিয়ে তাদের দিয়ে একই ভাষায় কথা বলায় এবং কথা বলছে। প্রত্যেকটা ঘটনা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আমরা নাম দিয়েছি সবগুলো ঘটনার। বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর একই ফাইন্ডিংস।

মির্জা ফখরুল বলেন, গতকালের সমাবেশে ওনারা হুংকার দিয়েছেন। বলা যেতে পারে হুমকি দিয়েছেন বিভিন্নভাবে। এটাই তাদের চরিত্র। এভাবে তারা সব সময় বিরোধী দলকে দমন করতে চায় এবং যে ধরনের ভাষা তারা ব্যবহার করেছেন, সেই ভাষা সম্পূর্ণ সন্ত্রাসের ভাষা। সেই ভাষা হচ্ছে পুরোপুরিভাবে বিরোধী দলকে ভয় দেখানো, সন্ত্রাস সৃষ্টি করা। তারা পরিষ্কার করে এমনও কথা বলেছেন— বের হতে দেওয়া হবে না, গলিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ কারো পৈত্রিক সম্পত্তি না। আমরা সংবিধান অনুযায়ী আমাদের যতটুক করার চেষ্টা করবো। তারা তো দেড় যুগ ধরে বাধাই দিচ্ছে, রাস্তায় তো দাঁড়াতে দেয়নি কোনোদিন। এখন কী কারণে হঠাৎ করে রাস্তায় দাঁড়াতে দিয়েছে, তারপরে আসল চরিত্র কী দাঁড়াবে কয়েকদিন পরেই দেখা যাবে। এমনি তো দেখেছেন গত কয়েকদিন যাবত খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় কীভাবে তারা আক্রমণ করেছে দলের কার্যালয়ে, আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির ওপরে।

তিনি বলেন, সংলাপের কোনো পরিবেশ বাংলাদেশে নেই। এখানে রাজনৈতিক যে সংকট তার সমাধানই সম্ভব না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন, যতক্ষণ না মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে, যতক্ষণ না এই সরকার পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, সংসদ বাতিল না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সংলাপের প্রশ্নেই উঠবে না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com