ফেরদৌসের ছবির পরিচালক এখন হোটেলে কাজ করেন

0

সিনেমার নেশায় সব বিক্রি করে আজ তিনি নিঃস্ব। নিজের বাড়ি, স্ত্রীর গয়না বিক্রি করেছেন। তাতেও ছবির অর্থের জোগান না হওয়ায় সুদের ওপর ঋণ নিয়েছেন। ভেবেছিলেন সিনেমা মুক্তি পেলে হয়তো দিন বদলাবে তার। সেই ভাবনা প্রতারক হয়ে হাজির হলো। সিনেমাটি তিনি কোনোরকমে শেষ করতে পারলেও সেটি মুক্তি দিতে পারছেন না। কোনো আয় না থাকলেও প্রতি মাসে নিয়মিতভাবেই যোগ হয় ঋণের সুদ। ধীরে ধীরে অভাব হয়ে ওঠে নির্মাতা পলাশের শত্রু।

সেই শত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ের জীবনে তিনি হঠাৎ নিজেকে একা হিসেবে আবিষ্কার করলেন। তাকে ছেড়ে গেল আত্মীয়-স্বজন। ছেড়ে গেছে সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ, স্ত্রীও। কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার মতো একা একা সিনেমা মুক্তির দায় নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যুবক পলাশ একটা সময় বেঁচে থাকার তাগিদে হোটেলের বয় হিসেবে চাকরি নিলেন। যার বুকের ভেতরে ছিল শিল্প সাধনার মন সেই পলাশ এখন হোটেলে ক্রেতাদের ভোজনবিলাসের পরিবেশক। এটাই বোধহয় নিয়তি! সিনেমার গল্প নয়, এই ঢাকার বাস্তব একটি ঘটনা। 

নামী অভিনেতাদের সাথে যার চলাচল, ওঠাবসা তিনি আজ হোটেলে খাবার দেন। বানিয়েছিলেন সিনেমা ‘গন্তব্য’। চিত্রনায়ক ফেরদৌস, নায়িকা আইরিনকে জুটি করে ছবিটি নির্মাণ করেছেন তিনি। আরও আছেন এ ছবিতে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কাজী রাজু, আফফান মিতুলসহ অনেক কলাকুশলী। ছবিটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত পরিচালক ছবিটি মুক্তি দিতে পারেননি।

পলাশের ভাষ্য, ‘পরিচালনার পাশাপাশি ছবিটির প্রযোজকও আমি। আমার সর্বস্ব শেষ করে ‘গন্তব্য’ সিনেমাটি নির্মাণ করেছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে সুদে ঋণ নিয়ে, জমি বিক্রি, স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে সিনেমাটির কাজ শেষ করেছি। ছবির সেন্সরও পেয়েছি অনেক দিন হয়। কিন্তু ছবিটি মুক্তি দেওয়ার জন্য টাকা আমার কাছে নেই। কিন্তু অভাবের আক্রমণে বিধ্বস্ত আমি। সবাই আমাকে ছেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এখন মিরপুরে একটি রেস্তোরাঁয় হোটেল বয়ের কাজ করছি।’

পলাশ বলেন, সিনেমার জন্য তো অনেক করেছি আমি। এই সিনেমা আমার জন্য কিছুই করলো না। অনেক জায়গায় চাকরি খুঁজেছি। কিছুই হয়নি। পেট চালানোর জন্য তাই দৈনিক ২৫০ টাকা হাজিরা ও তিন বেলা খাওয়ার চুক্তিতে রেস্তোঁরায় কাজ করছি। ছয় বন্ধু মিলে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং সেই চলচ্চিত্রটি সারাদেশে প্রদর্শন করার ঘটনা নিয়ে গড়ে উঠেছে সিনেমার কাহিনি। গল্পে আছে দুটি ভাগ, একটি শহরের, অন্যটি গ্রামের।

তিনি জানান, ইমপ্রেস টেলিফিল্মের কাছে ছবিটি বিক্রির আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ইমপ্রেস তার সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করেছে। একটি সিনেমার জন্য তারা প্রথমে ১০ লাখ টাকা দিতে চেয়েছে পলাশকে। পরে তারা ৭ লাখ টাকা দেবে বলে জানান। এখন তারা দিতে চাইছেন মাত্র ৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ লাখ ছবির কপিরাইট এবং বাকি এক লাখ টাকা অনলাইন স্বত্ব। এত কম টাকায় সিনেমা বিক্রি করা আদৌ সম্ভব নয়।

পলাশ দুঃখ করে বলেন, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হয়েও ইমপ্রেস কী করে একটি সিনেমা ৪ লাখ বা ১০ লাখ টাকায় কিনতে চায়! এত কম মূল্যে বিক্রি করার চেয়ে বিক্রি না করাই ভালো বলে মনে করি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com