আওয়ামী লীগ সরকার ‘পরিকল্পিতভাবে’ সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
কুমিল্লার পূজামণ্ডপের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া যুবক ইকবাল হোসেন এতোদিন কোথায় ছিলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনএপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শারদীয়া দুর্গাপূজার সময়ে বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলার কয়েকটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে শুক্রবার (২২ অক্টোবর) বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এই প্রশ্ন তুলেন।
তিনি বলেন, ‘এটা তো পরিস্কার পত্র–পত্রিকাগু্লো সব দেখেন, দেখলেই বুঝতে পারবেন। এটা সত্য ঘটনা সবাই এটা মানে যে, সরকারের মদদ ছাড়া কখনো সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি হয় না। যারা সরকারে থাকে তারাই করে।’
‘আজকে যে পত্র–পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, এই যে ইকবালের কথা কিছুক্ষণ আগে একজন বললেন। ইকবাল নামে একজন বলা যেতে পারে একটা অপ্রকৃতিস্থ এবং মাদকসেবী তাকে ধরা হয়েছে। এটা (ইকবাল) এতো দিন কোথায় ছিলো? এই বিশ্বাসটা কেকরবে? কারা তাকে সেখানে নিলো?’
সারা দেশে পূজামণ্ডপে সংঘটিত হামলা ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সরকারকে উদ্দেশ্যে করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কেনো আপনারা (সরকার) ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে গেলো সেখানে কোনো পুলিশ পাঠালেন না বা পুলিশ গেলো না বা পুলিশ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নিলো না। কেনো এটা হলো?’
‘রংপুরের ঘটনায় দেখলাম আমরা একদিকে ওসি, চেয়ারম্যান সবাই মিলে আলোচনা করছে একটা আপস করার চেষ্টা করছে।অন্যদিকে বাইরে থেকে এসে লোকজন মাঝি পাড়া জ্বালিয়ে দিয়েছে। দুর্ভাগ্য। তাহলে কি আমরা বলব যে, তাদের ছত্রছায়ায় এইঘটনা ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনার পর ওবায়দুল কাদের সাহেব কী করলেন? যখনই সেইদিন ঘটনাগুলো ঘটলো প্রথমে ওবায়দুল কাদের সাহেব বললেন, এটা বিএনপি–জামায়াতের লোকেরা করেছে। কথায় কথায় উনি একটাই কথা বলেবেন যে, যত দোষ নন্দঘোষ।’
আপনাদের চরম ব্যর্থতা যে, আজকে এই সমাজে কোনো মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারেন না। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের তারা ধর্মবিশ্বাস করেন তারা তাদের ধর্ম পালন করবেন, মুসিলম ধর্মের মানুষেরা তাদের ধর্ম পালন করবেন, বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবেন, খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবেন–এটাই তো বাংলাদেশ। আপনারা (সরকার) কী করছেন? অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে বাংলাদেশে একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছেন যা হাজার বছর ধরে চলে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেশুধুমাত্র মানুষের দৃষ্টিটা, মানুষের মনোযোগকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার এই বিষয়টাকে সামনে নিয়ে এসেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার একেক সময়ে একেকটা বিভাজন তৈরি করছে। সেই বিভাজনে একেক সময় একেকটাকে সামনে নিয়ে আসে। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষে শক্তি, বিপক্ষের শক্তি। এখন তারা ধর্মীয় বিভাজনে নেমে পড়েছে কি করে মানুষের মূল যে সমস্যা সেই সমস্যা থেকে তাদের বিভ্রান্ত করা যায়।’
আমাদের সমস্যা এখন আমাদের জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, আমাদের সমস্যা হচ্ছে যে, আমরা ভোট দিতে পারি না, আমাদের সমস্যা হচ্ছে যে, আমরা কথা বলতে বলতে পারি না, আমাদের অধিকার গুলো নেই, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংস হয়ে গেছে।সেই জায়গাগুলো থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে এসে একটা সাম্প্রদায়িক সংকট, সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি করছে।’
দেশের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল, ‘দেশের মানুষ দুঃসহ অবস্থার মধ্যে বাস করছে। একদিকে প্রতিদিন জিনিস পত্রের দাম হুহু করে বাড়ছে। চাল, তেল, লবণ, চিনির দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু মানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। যার ফলে মানুষ গরীব থেকে আরো গরীব হচ্ছে আর আওয়ামী লীগের লুটেরারা ধনী থেকে ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এমন একটা পর্যায় গেছে এখন বলা হয় যে, সিষ্টেম অব দ্য স্টেট হচ্ছে দুর্নীতি।’
আপনি যেখানে যাবেন? ছাত্র ভর্তি করতে যাবেন দুর্নীতি, আপনি হাসপাতালে যাবেন দুর্নীতি, আপনি একটা বিচারালয়ে যাবেন সেখানে দুর্নীতি। কোথায় দুর্নীতি নেই। আজকে দুর্নীতি এই সমাজকে একেবারে ক্ষয় করে ফেলেছে, নষ্ট করে ফেলেছে।’
এই্ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে জনগণের ঐক্য সৃষ্টির কোনো বিকল্প নাই উল্লেখ করে সরকার হটানোর জন্য দলমত নির্বিশেষে আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।