তাবিথের ওপর হামলার পর আতঙ্ক
প্রচারণা শুরুর পর থেকে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচারণায় বাধা ও মাইক ভাঙচুরের অভিযোগ ছিল বিএনপি’র মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের। এবার তার প্রচারণায় সরাসরি হামলা হয়েছে। এতে তাবিথসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। হামলার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দেয়ার পর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এর আগে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচারণায় হামলা ও বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়েছিল নির্বাচন কমিশনে। সর্বশেষ মেয়র প্রার্থীর প্রচারণায় হামলার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনী মাঠে। যদিও হামলার পর দিনভর প্রচারণা চালিয়েছেন তাবিথ। দুপুরে হামলার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করে বিএনপি।
বিকালে কমিশন বৈঠক শেষে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাটি তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে হামলার বিষয়ে দারুস সালাম থানার ওসি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুই পক্ষের মিছিল চলার সময় ধাক্কাধাক্কি হয়েছে, কোন হামলা হয়নি।
গতকাল সকালে গাবতলীর আনন্দনগর তেলের মিল এলাকায় তাবিথের প্রচারণায় দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। সকাল ১১ টায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী দলীয় নেতাকর্মীসহ গাবতলী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন। এসময় মানবজমিন প্রতিবেদকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও সেখানে ছিলেন। গণসংযোগ চলাকালে পিছন থেকে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। হামলাকারীদের কয়েকজন তাবিথ আউয়ালের ওপর চড়াও হয়। তারা ধানের শীষের প্রার্থীকে কিল-ঘুষি মেরে আহত করে। এ সময় দলের নেতা-কর্মীরা তাবিথ আউয়ালকে ঘিরে বেষ্টনী তৈরি করলে সেখানেও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় দুবৃর্ত্তরা।
ইট নিক্ষেপ ও ঘুষিতে তাবিথ আউয়াল মুখ ও মাথায় আঘাত পান। তাৎক্ষণিক সেখানে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এরপর তাবিথ আউয়াল বক্তব্য দিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। হামলার জন্য ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে দায়ী করেন তিনি। তার বক্তব্য চলাকালে ফের হামলা চালায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এসময় তাবিথের প্রচার কর্মীদের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে অবস্থান নেয়। কিন্তু তারা পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে। এসময় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। হামলার শিকার হন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার সাইফুদ্দিন রবিন, বৈশাখী টিভির সাঈদ খানসহ অন্তত ২০জন। তাবিথ আউয়াল অভিযোগ করে বলেন, কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আমাকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে। স্থানীয় ৯নং নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সরোয়ার মাসুমের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। মাছুম ও তার গুন্ডা বাহিনী আমার মাথায় ইট মেরেছে, আমার কর্মীদের মেরেছে। তারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের হাতে অস্ত্র, ইটপাটকেল ও ডিম ছিল। হামলার শিকার হয়েছে সেখান থেকে সমস্ত কর্মীদের নিয়ে বের হয়ে এসেছি। এই হামলার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে জনগণ যে সাড়া দিচ্ছে, সেই সাড়া থেকে ধানের শীষের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়ে গেছে-সেটাকে ভয় পেয়ে এই হামলা করা হয়েছে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, হামলা আমাদের দমাতে পারবে না। আমরা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার চালিয়ে যাবো।
হামলার পর গোলারটেক, দিয়া বাড়ি, বর্ধনবাড়ি, বাঘবাড়ি, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড হয়ে ১১ নং ওয়ার্ডের কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে গণসংযোগ করেন। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তাবিথ বলেন, ‘আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছিলাম। পেছন দিক থেকে কাপুরুষের মতো আমাকে টার্গেট করে আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। আমার সাথের সহকর্মী নেতৃবৃন্দকে আঘাত করা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হলো-এই হামলা কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সামনেই হয়েছে। তারা নিজের চোখে দেখেছেন এই হামলা ৯ নং ওয়ার্ডে ঠেলাগাড়ী প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মজিব সরোয়ার মাসুম ও তার লোকেরা করেছে। আমি আশা করছি, পুলিশ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি আরো বলেন, আমি আমার প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, আমার ওপর হামলা বিশেষ করে আমার মনোবল নষ্ট করা যাবে না। আমাদের পিছু হটাতে পারবেন না। আমাদের প্রচারণার কাজ এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। আগামী ১লা ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তা প্রমাণ করবো। দুপুরে লেকভিউ, দক্ষিণ পাইকপাড়া, বটতলা, মধ্য পাইকপাড়া, লালওয়াল, নতুন বাজার, ডি টাইপ কলোনী, কল্যানপুর হাউজিং এস্টেট, পোড়াবস্তি, শহীদ মিনার রোড, শেওড়াপাড়া কাজীপাড়া, মিরপুর ১০ এ গণসংযোগ করে তাবিথ আউয়াল বলেন, ভোটারা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন। ইভিএম নিয়ে ভোট নিয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী বলেন, আমাদের মাইক ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের বাধা দেয়া হচ্ছে। এভাবে চললে ভোটাররা আতংকের মধ্যে থাকবে। এ অবস্থা থাকলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।
এসময় গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা বেলাল আহমেদ, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাইদুল ইসলামসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে ইব্রাহিমপুর এলাকায় প্রচারণা কালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, যবুদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু যুক্ত হন। কচুক্ষেত স্বাধীনতা চত্বরে পথসভা করেন তারা। এসময় মওদুদ আহমদ বলেন, এবার আমরা ভোট চুরি করে নির্বাচন করতে দেব না। এবার দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। তিনি বলেন, এই সরকার এবার যদি কোনো রকম ষড়যন্ত্র করে জাতীয়তাবাদী দল এর জবাব দিতে প্রস্তত। আমরা সেটা হতে দেব না। ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করবো। ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করবো।