চট্টগ্রামে পুনঃনির্বাচন ঢাকায় ইভিএম বাতিলের দাবি বিএনপি’র
চট্টগ্রাম-৮ আসনে পুনরায় ব্যালটে নির্বাচন দেয়া এবং ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ইভিএম বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল বেলা ১১টায় আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে দলটির প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে এ দাবি জানায়। বৈঠক শেষে দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনে কি ঘটেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশ হয়েছে। সেটি নিয়ে আজ কথা বলেছি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের চেয়েও অনেক বেশি খারাপ হয়েছে এই নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থা অধিকতর খারাপের দিকে যাচ্ছে। উন্নতি তো দূরের কথা অবনতির দিকে যাচ্ছে।
ফলে আস্থাহীনতা বাড়ছে। চট্টগ্রামে সব কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ১৭০ পোলিং স্টেশনের মধ্যে সবগুলোই দখল করে নিয়েছিলো ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রের বাইরের কেউ থাকতে পারবেন না, গাড়ি-মোটরসাইকেল চলবে না। কিন্তু সেখানে চট্টগ্রাম বিভাগের যত মেয়র, কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থান দৃশ্যমান ছিল। সবাই সরাসরি কেন্দ্র দখল করেছে, মিছিল করেছে। যেখানে ভোট দেয় তা দখল করে নিয়েছে। মৃত মানুষের ভোট, প্রবাসীদের ভোট, জেলে থাকাদের ভোটও দিয়েছে। ইভিএমে ভোট ডাকাতি হয় চট্টগ্রামের ভোটে তা প্রমাণিত হয়েছে। আমির খসরু বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের ভোটে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেয়নি। যারা যেতে পেরেছে তারা আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছে, ভোটের ব্যালট ইউনিটে ভোটের কাজ তারা সেরে ফেলেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও যেখানে ইভিএমে ভোট হয়েছে সেখানেও এমন হয়েছে, চট্টগ্রামে তার চেয়েও খারাপ হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশনকে অনুরোধ করেছি চট্টগ্রামের নির্বাচনটি বাতিল করে দিন। ব্যালটের মাধ্যমে পুনঃনির্বাচন দিন। কারণ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার সেখানে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ ছিল না। সেখানে কেন্দ্র দখল করেছে, ইভিএমের পাসওয়ার্ড নিয়েছে, ব্যালট ইউনিটে তারা ভোট দিয়েছে। আমরা বলেছি ভোট বাতিল করে ব্যালটে ভোটের ব্যবস্থা করুন। ইভিএমের ভোটে জালিয়াতি হলেও চ্যালেঞ্জের কোনো সুযোগ নেই।
ভারতের চেয়ে ১১ গুন টাকায় ইভিএম মেশিন কেনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে অডিট ট্রেইল ও পেপার ট্রেইল নেই। ভারতের মেশিনে তা আছে। পাঁচ ছয়টি দেশে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে কমিশন বা সরকার নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের কমিশন এবং সরকার প্রশ্নবিদ্ধ। কমিশন কি বলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বলছে সব ঠিক আছে। আগে ৩০ ডিসেম্বরেও বলেছিল সব ঠিক আছে, এখনও তাই বলছে। তিনি বলেন, আমাদের উত্তরের প্রার্থী তাবিথের উপর হামলা হয়েছে। এ্যানিসহ ১৫ জন হামলায় আহত হয়েছে। ঢাকার নির্বাচনে তারা রাস্তার ওপর অফিস করেছে, পোস্টার লাগিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থীকে বাধা দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের উপর সরকার খবরদারি চালাচ্ছে বলে মনে করি। কমিশনের উপর সমস্ত আস্থা হারিয়ে ভোট ব্যবস্থা চলছে। কমিশনের উপর ন্যূনতম আস্থা থাকলে বিএনপি ভোটে অংশ নিচ্ছে এটি কমিশনের প্রতি আস্থা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু জনগণের কোনো আস্থা নেই।
বৈঠকে ইসিরর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, মোঃ রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চট্টগ্রাম দক্ষিনের বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।
সিটি নির্বাচনে ইভিএম বন্ধ লিখিত দাবি জানাল বিএনপি: এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করার জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ আবেদন জানানো হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বরাবর এ চিঠি দেন মির্জা ফখরুল। চিঠিতে তিনি বলেন, গত ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ উপ-নির্বাচনের বিস্তারিত চিত্রসহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আমি মনে করি বিষয়টি আপনারা ও অবহিত আছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই চিত্র ইভিএম নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার সম্পর্কে আমাদের দাবিকে আরও পাকাপোক্ত করেছে। ফখরুল বলেন, ইভিএম মেশিনের দুইটা ইউনিট। একটি কন্ট্রোল ইউনিট, অন্যটি ব্যালট ইউনিট। এর মধ্যে ব্যালট ইউনিট অরক্ষিত। কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিংয়ের পর একজনের ভোট দিতে পারেন অন্যজন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কমিশনের হাতে এখনো সময় আছে নিরপেক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করার। সেই লক্ষ্যে ইভিএমের অকার্যকারিতাকে বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যবস্থা বাতিল করে প্রচলিত ব্যালট পেপারে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।