শিশুর বিকাশে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই

0

শিশুর বিকাশে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই। আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স (এএপি) ৬ মাসের জন্য একচেটিয়া বুকের দুধ খাওয়ানোর সুপারিশ করে।

এমনকি শিশুকে অন্যান্য খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি অন্তত এক বছর বয়স পর্যন্ত তা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয় ২ বছর বা তারও বেশি বয়স পর্যন্ত।

তবে অনেক মায়েরাই শিশুকে বুকের দুধের বদলে ফর্মূলা দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করেন। তবে ফর্মূলা দুধে মায়ের দুধের মতো অতোটা পুষ্টিগুণ থাকে না। তাই প্রত্যেক শিশুকেই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো জরুরি।

মায়ের দুধ শিশুদের জন্য সর্বোত্তম পুষ্টি প্রদান করে। এতে সঠিক পরিমাণে পুষ্টি আছে, যা সহজেই হজম করতে পারে শিশু। এমনকি নানা ধরনের কঠিন রোগের জীবাণুর সঙ্গেও লড়াই করতে পারে বুকের দুধে থাকা পুষ্টিগুণ।

বুকের দুধ খাওয়ালে শিশু যেমন উপকৃত হয় ঠিক তেমনই মায়েরও বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মায়ের বুকের দুধ কীভাবে শিশুর বিকাশ ঘটায় ও কোন কোন রোগ থেকে শিশুকে বাঁচায়-

>> বুকের দুধ শিশুদের জন্য আদর্শ পুষ্টি প্রদান করে। মায়ের বুকের দুধে শিশুর জীবনের প্রথম ৬ মাসের জন্য যা যা প্রয়োজন তা সঠিক অনুপাতে থাকে।

জন্মের পর প্রথম দিনগুলোতে মায়ের স্তন কোলোস্ট্রাম নামক ঘন ও হলুদাভ তরল তৈরি করে। এতে প্রোটিন বেশি, চিনির পরিমাণ কম ও উপকারী যৌগ থাকে। যা সত্যিই একটি বিস্ময়কর খাবার বলে বিবেচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।

কোলোস্ট্রাম হলো আদর্শ প্রথম দুধ। যা নবজাতকের অপরিণত পরিপাকতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে। প্রথম কয়েক দিন পর, শিশুর পাকস্থলীর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মায়ের স্তনও প্রচুর পরিমাণে দুধ উৎপাদন করতে শুরু করে।

বুকের দুধের জাদুকরী হলেও এতে ভিটামিন ডি এর স্বল্পতা থাকে। তাই শিশুরে শরীরে অবশ্যই সকালের রোদ লাগাতে হবে।

>> বুকের দুধে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবডি থাকায় শিশুর শরীর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। কোলস্ট্রাম দুধের কারণেই শিশুর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।

যা শিশুকে বিভিন্ন রোগ থেকে প্রতিরক্ষা করে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, যে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো হয় না তারা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন সংক্রমণে ভোগে।

>> বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুর বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। মধ্য কানের সংক্রমণ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, শিশুর গুরুতর সর্দি, কান বা গলা সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমায় বুকের দুধ।

এছাড়া অন্ত্রের সংক্রমণ, সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম, অ্যালার্জিজনিত রোগ যেমন- হাঁপানি, এটোপিক ডার্মাটাইটিস ও একজিমা, পেটের অসুখ, ডায়াবেটিসসহ শিশুর লিউকেমিয়াও প্রতিরোধ করে বুকের দুধ।

>> বুকের দুধ শিশুর স্বাস্থ্যকর ওজন বাড়ায় ও শৈশবের স্থূলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। গবেষণার তথ্য অনুসারে, ৪ মাসের বেশি সময় ধরে বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুর অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলত্বের ঝুঁকি কমে।

>> যেসব শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় তাদের শরীরে ফর্মুলা খাওয়ানো শিশুদের তুলনায় লেপটিন বেশি থাকে। লেপটিন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রন ও চর্বি সঞ্চয় করার জন্য একটি মূল হরমোন।

>> বুকের দুধ শিশুরে বুদ্ধিমত্তার সঠিক বিকাশ ঘটায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুদের তুলনায় ফর্মুলা খাওয়ানো শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে পার্থক্য আছে।

বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুদের উচ্চ বুদ্ধিমত্তার স্কোর থাকে ও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের শেখার সমস্যা ও আচরণগত সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

আজ থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। মায়ের দুধের প্রয়োজনীয়তা ও শিশুর স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দিতে এই বিশ্বব্যাপী এই সপ্তাহ পালন হয়। প্রতিবছর ১-৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হয়।

১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ১ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস ও ১-৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে। ২০১০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ জাতীয়ভাবে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে।

সূত্র: হেলথলাইন

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com