সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (কুসিক) নির্বাচন কমিশন (ইসি) চুনোপুঁটিদের ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে আইন প্রয়োগ করেছে। তবে রাঘব বোয়ালদের ক্ষেত্রে ইসি আইন প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আত্মসমর্পণ করেছে। নির্বাচন কমিশন যদি আত্মসমর্পণ করে, তাহলে নাগরিকরা যাবে কোথায়?
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কুমিল্লা সিটির নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনান্য কমিশনাররা কতগুলো বিষয়ে পরস্পরবিরোধী এবং অসংলগ্ন বক্তব্য দিয়েছেন। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে আমাদের আশঙ্কা।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) একটি নিকৃষ্ট যন্ত্র বলে মন্তব্য করে সুজন সম্পাদক বলেন, কুসিক নির্বাচনে ইভিএম কাঠগড়ায় ছিল। ইভিএম বিষয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। বিগত জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছিল ৬টি আসনে আর ২৯৪ আসনে নির্বাচন হয়েছিল পেপার ব্যালটে। ইসির তথ্যানুযায়ী, ২৯৪ আসনে যেখানে পেপার ব্যালটে ভোট হয়েছে, সেখানে ভোট পড়েছে ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে যে ছয় আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছে সেখানে ভোট পড়েছিল ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ ৩০ শতাংশ পার্থক্য। তার মানে যেখানে পেপার ব্যালটে ভোট হয়েছে সেখানে কারসাজি করা হয়েছে, না হয় যেখানে ইভিএমে ভোট হয়েছে, সেখানে মানুষকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে।
ইভিএম যদি মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে, সেই ইভিএম ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুজন সম্পাদক বলেন, ২০১৭ সালে কুমিল্লায় পেপার ব্যালটে ভোট পড়েছিল ৬৪ শতাংশ। এবারে সেখানে ভোট পড়েছে ৫৯ শতাংশ। ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে, বায়োমেট্রিক ছাপ না মেলায় অনেকে বিরক্ত হয়ে চলে গেছে।
সুজন সম্পাদকের মতে- যে কোনো যন্ত্র যা সফটওয়্যার দিয়ে পরিচালিত হয়, তাতে কারসাজি করা যেতে পারে। যারা প্রোগামিং করে তারাও কারসাজি (ভোট ডাকাতি) করতে পারে। আবার যেহেতু নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওভার রাইটিং এর ক্ষমতা দেওয়া আছে, তারাও কারসাজি করতে পারেন।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই ইভিএম একটা নিকৃষ্ট যন্ত্র, এটা প্রতিষ্ঠিত। পেপার না থাকায় ইভিএমে নির্বাচন কমিশন যে তথ্য দেবে আমাদের তাই গ্রহণ করতে হবে। ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে, এর পেছনের লোকের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা না ফিরলে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কখনই সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ফেরানোর প্রয়োজনেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যথাযথ তদন্ত করে এ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে তাদের স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।