ড. ইউনূসের মামলা: আইনজীবীর অ্যাকাউন্ট জব্দ

0

মামলা সমঝোতার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১২ কোটি টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠা আইনজীবী ইউসুফ আলীর সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।

অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী আজ রোববার গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখেছি ছয়টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। এর মধ্যে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট তিনটি, পার্টনারের দুটি ও তার চেম্বারের নামে একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

তবে সমঝোতার অভিযোগ অস্বীকার করে আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বঞ্চিত করে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও অসত্য।

তিনি বলেন, তথাকথিত সামাজিক ব্যবসার ধ্বজাধারী সুদখোর ইউনূসকে ‘চুবানি’ দিয়েই সুদে-আসলে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বন্ধুদের প্রাপ্য ন্যায্য পাওনা আদায় করে দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি কত পেয়েছি সেটা বলতে চাই না। এটা ক্লায়েন্টের সঙ্গে আমার গোপনীয় চুক্তি। আমার মক্কেল যেটা দিয়েছেন, সেটাই আমি পেয়েছি। তবে আমরা বড় অংকের ফিস পেয়েছি। আমার ক্লায়েন্টরা বড় অংকের টাকা পেয়েছে। আমাকে বড় অংকের ফিস দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ক্লায়েন্টদের মধ্যে যারা তিন কোটি বা তার উপরে পেয়েছে তারা নিজেরা ঠিক করেছিল ১৫/২০ লাখ টাকা করে দেবে। আমার এক শ’ জন ক্লায়েন্ট তিন কোটি টাকার উপরে পেয়েছে। এটা থেকে আপনারা ধারণা করতে পারেন আমি কত টাকা পেয়েছি। ক্লায়েন্টরা আমাকে হাসি মুখে ফিস দিয়েছেন। তারা কারো কাছে অভিযোগ করেননি।’

গত ৩০ জুন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় রিটকারীদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার প্রসঙ্গ তোলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছেন, ‘শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদের মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে। আদালত বলেন, আদালতকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়ে থাকে। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয় তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। আমি চাই না কোর্ট এবং আইনজীবীর সততা নিয়ে যেনো কোনো প্রশ্ন উঠুক। এ সময় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ কেন, উপমহাদেশের এমন কোনো আইনজীবী জন্ম নেয়নি যার ফিস ১২ কোটি টাকা হবে।’

এ পর্যায়ে আদালত ড. ইউনূসের আইনজীবীকে বলেন, ‘আপনি কত টাকা ফিস নিয়েছেন? তখন আইনজীবী বলেন, আমি ২০ লাখ টাকা নিয়েছি। আদালত বলেন, আপনি তো ২০ লাখ নিয়েছেন, কিন্তু চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আইনজীবী কীভাবে ১২ কোটি টাকা নেন।’

এরপর আদালত শ্রমিকরা কে কত টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তার তালিকা দাখিল করার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত নথিও দাখিল করতে বলা হয়েছে। এসময় আইনজীবীরা আদালতকে জানান চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা এখন পর্যন্ত ৩৮০ কোটি টাকা পেয়েছেন। বাকি আট শ্রমিকের মধ্যে চারজন দেশের বাইরে থাকায় তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আর চারজন শ্রমিক মারা যাওয়ায় তাদের ওয়ারিশ জটিলতা নিরসন না হওয়ায় অর্থ পরিশোধ সম্ভব হয়নি। আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। শ্রমিকদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন দায়ের করা হয়। আবেদনকারী সংগঠনের আইনজীবী এডভোকেট ইউসুফ আলী বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কাছে শ্রমিকদের পাওনা আড়াই শ’ কোটি টাকার বেশি। এই পাওনা টাকার দাবিতে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়েছে।

২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে গ্রামীণ টেলিকমে ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলে আসছে। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে এ ছাঁটাই করা হয়। এরপর সেই নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ জন কর্মী। ওই ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল শ্রমিকদের পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছিলো আদালত। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। বিবাদীদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমনও জারি করে আদালত।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান।

মামলায় বলা হয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ শ্রমিকদের দেয়ার কথা থাকলেও তা তাদের দেয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা রুজু হয়।

সূত্র : বাসস

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com