বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক: দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নিতে হবে

0

দেশের বিভিন্ন জেলায়, বিশেষ করে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় সেখানকার সড়ক-মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন এবং এ কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, যা মানুষের জীবনে নতুন ভোগান্তির সূত্রপাত ঘটিয়েছে। উল্লেখ্য, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) আওতাধীন সারা দেশে আড়াই হাজার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বন্যায় ১০টি জেলার অন্তত ৪৭২ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে।

সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মনিটরিং সেলের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ থেকে ২৩ জুন ১০টি জেলার ৪১টি সড়কের ৪৭২ কিলোমিটার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উদ্বেগজনক হলো, ৭ জুলাই অফিস শেষে ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা শুরু হলে সড়কে যাত্রী ও গাড়ির চাপ বাড়বে। এ অবস্থায় সড়ক খারাপ থাকায় সিলেট অঞ্চল ও উত্তরবঙ্গে যাতায়াতে মানুষের ভোগান্তি অনেকগুণ বাড়বে।

একটানা বর্ষণের ফলে মানুষের জীবন-জীবিকায় মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে-এ কথা যেমন সত্য, তেমনি বৃষ্টিনির্ভর আমন মৌসুমে বৃষ্টি হচ্ছে পরম কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে এ সময় বৃষ্টি অধরা থাকলে বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল আমনের আবাদ নিয়ে কৃষককুল পেরেশানির মধ্যে নিপতিত হয়। এ দেশের জীবনধারায় জল কখনো পরম আরাধ্য বস্তু, আবার কখনো জীবননাশিনীরূপে আবির্ভূত।

সিলেট-সুনামগঞ্জ এবং দেশের অন্যান্য জেলায় সাম্প্রতিক বন্যা যেন তারই স্বাক্ষর বহন করছে। বৃষ্টির পানিকে সঠিকভাবে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে হলে ব্যবস্থাপনার কাজটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও টেকসই হওয়া জরুরি। পানিসৃষ্ট যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক যাতে সম্পদ বিনষ্টের পাশাপাশি মানুষের চলার গতি শ্লথ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে আমাদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

দেশের সব নদ-নদী রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হলে বর্ষার জল স্ফীত হয়ে সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ না করে যথাযথভাবে সাগরে নিপতিত হবে। এতে মানুষের জীবন ও সম্পদ যেমন রক্ষা পাবে-এতে কোনো সন্দেহ নেই। বস্তুত সার্বিক অর্থে মানুষ তথা দেশের মঙ্গল চাইলে নদী ও বাঁধ ভাঙন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এজন্য সর্বাগ্রে নদ-নদীর নাব্য বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড ও অদূরদর্শিতার ফলে আমাদের খরস্রোতা নদীগুলো আজ জীর্ণ-শীর্ণ। নদীগুলোকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে সঠিক নিয়মে ড্রেজিং করতে হবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নদ-নদীগুলোর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ও দাবি আরও জোরালো করতে শক্ত কূটনৈতিক ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ হচ্ছে ভাটির দেশ। উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর উৎস দেশের ভূসীমানার বাইরে।

অভিন্ন নদীগুলোর গতি-প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারত ও নেপালের সঙ্গে গঠনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে তা কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়। ঈদের আগেই সিলেট-সুনামগঞ্জ এবং দেশের অন্যান্য জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়কগুলো মেরামত করে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি হ্রাসে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com