১০০ বছর পর বৈদেশিক ঋণ খেলাপি রাশিয়া
একশ বছরের বেশি সময় পর রাশিয়া প্রথমবারের মতো ঋণ খেলাপি হলো। রোববার (২৬ জুন) দেশটি ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয় বলে জানা গেছে। রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী এই পরিস্থিতিকে ‘একটি প্রহসন’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
রাশিয়ার কাছে একশ মিলিয়ন ডলার অর্থ প্রদান করার অর্থ রয়েছে এবং তা দিতে ইচ্ছুক, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে লেনদেন জটিল হয়ে পড়েছে। ক্রেমলিন ঋণ খেলাপি এড়াতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল কিন্তু তা ঠেকাতে পারেনি। এটি রাশিয়ার মর্যাদার ওপর একটি বড় আঘাত বলে মনে করা হচ্ছে।
২৭ মে, ১০ কোটি ডলার সুদের অর্থ প্রদানের কথা ছিল দেশটির। রাশিয়া বলছে যে অর্থ ইউরোতে পাঠানো হয়েছিল ইউরোক্লিয়ারের একটি ব্যাংকে, যা বিনিয়োগকারীদের প্রদান করবে। কিন্তু সেটি সেখানে আটকে গেছে। সময়মতো সেটি পাননি পাওনাদাররা।
এদিকে, ইউরোতে অর্থ প্রদান করা রাশিয়ান বন্ডের কিছু তাইওয়ানিজ হোল্ডার সুদের পেমেন্ট পাননি বলে জানা গেছে। অর্থ নির্ধারিত তারিখের ৩০ দিনের মধ্যে পৌঁছায়নি। সেটির সময় শেষ হয় রোববার সন্ধ্যায়। ফলে এটি ঋণ খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইউরোক্লিয়ার পেমেন্ট ব্লক করা হয়েছে কি না তা তারা বলবে না, তবে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে যে এটি সমস্ত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে।
এর আগে ১৯১৮ সালে বৈদেশিক ঋণ খেলাপি হয় রাশিয়া। বলশেভিক বিপ্লবের সময় নতুন কমিউনিস্ট নেতা ভ্লাদিমির লেলিন রাশিয়ার ঋণ পরিশোধ করতে অস্বীকার করেছিলেন সে সময়।
যে কোনো ধরনের ঋণ পরিশোধে রাশিয়া সর্বশেষ খেলাপি হয় ১৯৯৮ সালে। বরিস ইয়েলৎসিনের পতনের সময় রুবলের সংকট দেখা দিলে অভ্যন্তরীণ বন্ডগুলোতে অর্থ প্রদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল মস্কো। তবে বিদেশি ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি।
ইউক্রেন আগ্রাসনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে আন্তর্জাতিক লেনদেন নিয়ে বিপাকে পড়ে রাশিয়া। রাশিয়ার সরকার বলছে যে তারা সমস্ত অর্থ প্রদান সময়মতো করতে চায়, এবং এখন পর্যন্ত এটি সফল হয়েছে।
বিশ্বের প্রধান আন্তর্জাতিক লেনদেন পরিষেবা সুইফট থেকেও রাশিয়ার বড় ব্যাংকগুলোকে বাদ দেওয়া হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। ফলে রাশিয়ার রপ্তানি বাণিজ্যও বাঁধাগ্রস্ত হয়।
রাশিয়ার কাছে ১৫টি আন্তর্জাতিক বন্ড রয়েছে যেগুলোর মূল্যে দেনার পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। যার অর্ধেকই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে দেনা হিসেবে আছে। এরকমই একটি বন্ডের কিস্তি বাবদ ১০ কোটি ডলার পরিশোধ করার কথা ছিল মস্কোর।
সূত্র: বিবিসি, ব্লুমবার্গ