শপথ নিলাম- যেকোনও ত্যাগের বিনিময়ে গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবোই: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আজ জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উদযাপন করতে হচ্ছে। আজকের এই দিনে আমরা শপথ নিলাম, যেকোনও ত্যাগের বিনিময়ে হলেও আমরা দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করবো। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুযায়ী তাঁর ১৯ দফাকে বাস্তবায়িত করবো।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (১৯ জানুয়ারি) জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিলেন। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে যখন আমরা তাঁর জন্মদিন উদযাপন করছি তখন আমাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী কারাগারে আটক করে রেখেছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। গ্রেফতার করেছে, হত্যা করেছে, গুম করেছে। দেশকে একটা অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ।’
আসন্ন ঢাকা সিটি নির্বাচনে ইভিএমে জনগণের রায়ের প্রতিফলন হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতার কারণে এ ইভিএম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখ রাতে ডাকাতি করে নিয়েছে। এই সিটি নির্বাচনেও একটি দলই প্রাধান্য পাচ্ছে। এখানে একটি অযোগ্য নির্বাচন কমিশন রয়েছে। তারা কোনও রকম ব্যবস্থা নিতে সক্ষম নয়। তাদের সেই যোগ্যতা নেই। তারা যে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সেটি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়ার আরেকটি অপকৌশল। এতে জনগণের রায়ের প্রতিফলন কখনও ঘটবে না।’
বহুদলীয় গণতন্ত্রে সকল দলের সমান সুযোগ আছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণতন্ত্রের সমস্ত পরিসরগুলোকে সংকুচিত করে ফেলছে। স্পেসগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।’
নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে ব্যর্থ, অযোগ্য, তারা যে নির্বাচন পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন না তার প্রমাণ হলো তারা এমন একটি দিনে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে যেদিন হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বড় পূজা ছিল। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- যেখানে (অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে) এই সরস্বতী পূজা হয়, ঠিক সেখানেই নির্বাচনের কেন্দ্রগুলো। নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতার কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইভিএম ব্যবস্থাটি হচ্ছে একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা। পুরনো যে ব্যালট ব্যবস্থা তাতে মোটামুটি কিছুটা জনগণের ফলাফল আশা করা যায়, যদি চুরিটা না হয়।’
প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৪তম জন্মদিন উপলক্ষে সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, ঢাকার দুই সিটিতে বিএনপি সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনসহ দলের অন্য নেতারা এতে অংশ নেন। এসময় ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।