নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নেই
আসন্ন ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ইভিএম বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ আহ্বান জানান জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা আসম আব্দুর রব। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নেই। সে কারণে সুষ্ঠু ভোট ছাড়াই ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নিত্যনতুন কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। জনগণকে নানাভাবে হয়রানি ভয়-ভীতি সন্ত্রাস ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে নির্বাচন বিমুখ করা হয়েছে।
নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। আর ইভিএম ভোট চুরি নতুন পদ্ধতি। তিনি বলেন, যে কোন যন্ত্র বা প্রযুক্তি চলে মানুষের কমান্ডে। কিন্তু যারা কমান্ডে আছে তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইভিএমের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করবে একথা বলাই বাহুল্য।
ইভিএমে প্রযুক্তি এবং তথ্য পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে মধ্যরাতে ভোটের ধারাবাহিকতায় এটা হবে আরও একটি জঘন্য দৃষ্টান্ত। ইভিএম পদ্ধতি বিতর্কিত এবং সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। রব বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানে নির্বাচন সম্পর্কে প্রকাশ্যে পেপার ব্যালটের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে ভোটের গোপনীয়তা রক্ষিত হবে। কিন্তু ইভিএমে ভোট এর গোপনীয়তা থাকেনা, ভোটারদের কাছে কোন প্রমাণ থাকে না। একটি সত্যিকারের গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার ও সংবিধান লংঘন।
জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণ সেই মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। তারা সুষ্ঠু ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেন। কিন্তু বর্তমানে দেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ভোট ছাড়াই নির্বাচন ও সরকার গঠিত হচ্ছে।
পৃথিবীর প্রায় দেশে ইভিএমে ভোট গ্রহণ শুরু করেও কারচুপির অভিযোগে সেটা বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে আ স ম রব আরো বলেন, পৃথিবীর বহু উন্নত দেশে ইভিএম চালু হয়েছিল। কিন্তু সেসব দেশে এখন ইভিএম স্থগিত করা হয়েছে। কারণ হিসেবে ঐসব দেশের বিশেজ্ঞগণ উল্লেখ করেছেন, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট কারচুপি হয়, হাইজ্যাক ও ম্যানুপুলেশন সম্ভব। অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশগুলোতে ইভিএম-এ ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এটি জোর করে জনগণের ভোটাধিকাররের উপর চাপিয়ে দেবার অর্থই হলো, করাপ্ট প্রাক্টিসের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতা স্থায়ীকরণ।
আজকে সব দল এবং স্টোক হোল্ডারগণ ইভিএমের বিপক্ষে হওয়ার পরেও তা বাতিল করা হচ্ছে না অভিযোগ করে রব বলেন, নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, যদি সবাই বলেন ইভিএম নিয়ে ভালোভাবে নির্বাচন করা যায় না, তাহলে আমরা ইভিএম ব্যবহার করব না। বর্তমানে প্রধান রাজনৈতিক দল ঐক্যফ্রন্ট ও স্টোকহোল্ডারগণ ইভিএম এর বিপক্ষে। তারপরেও কেন জোর করে ভোটারদের উপর এই ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে? কেবলমাত্র অসৎ উদ্দেশ্য, অর্থ অপচয়, দুর্নীতি বা অর্থ আত্মসাতের জন্য জন্য কি-না তা ব্যাপকভাবে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাঈদ, নুরুল আমিন বেপারী, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জহির উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, সানোয়ার হোসেন, ঐক্যফ্রন্টের দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।