গুম প্রতিরোধে সবাইকে এক হয়ে দাঁড়াতে হবে

0

গুমের প্রতিবাদ জানাতে সবাইকে এক হয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাজনৈতিক ও মানবাধিকারকর্মী এবং গুমের শিকার ব্যক্তির স্বজনেরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে তারা বলেন, গুম সমাধানে এখন জাতীয় ঐক্য দরকার। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে ‘আর একটিও গুম নয়, নিষ্ঠুর সরকারকে না বলুন’ শিরোনামে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, নাসিরউদ্দীন এলান, নিখোঁজ সাজ্জাদ হোসেন সাজুর মা শাহেদা বেগম, কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী নাসিমা আক্তার প্রমুখ।

সেমিনারে মায়ের ডাকের পক্ষে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আফরোজা ইসলাম। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটতেই থাকবে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সঙ্গে করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা এখানে দুঃখের রুটি সেঁকার জন্য আসিনি। এ সরকারের কাছে ফরিয়াদ করে লাভ নেই। দশ বছরে আমরা কিছু করতে পেরেছি? চিল যেভাবে বাচ্চা তুলে নিয়ে যায়, সেভাবে তারা বহু মানুষকে তুলে নিয়ে গেছে। চলেন, আমরা একসঙ্গে নামি। পুলিশ রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে মাঠে নামার কথা বলেন তিনি।

মান্না বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের সরকার ফিরিয়ে দেবে না। তারা বলবে, গুম হওয়া ব্যক্তিরা কোথাও পালিয়ে গিয়েছে। তাই গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গুমের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাহিনী জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, গুমের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো জড়িত। এ সরকার সত্যের কাছে থাকতে চায় না। জাতিসংঘ বলল, এতগুলো লোকের লিস্ট দিলাম, তারা এখন কোথায়, তাদের খোঁজ দিন। সরকার তাদের খোঁজ দিতে পারেনি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গুমের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, তারা গুমের সঙ্গে জড়িত নয়। এরপর কীভাবে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকেন এটা আমি বুঝি না। গুম হওয়া মানুষের স্বজনদের আহাজারি তাদের স্পর্শ করে না। মায়েদের-বোনেদের কান্না তাদের কানে পৌঁছায় না। তারা গুমের কথা স্বীকারই করেন না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল হয়েছে অনেক পরে। ভবিষ্যতে আরও অনেক ট্রাইব্যুনাল করতে হবে। এই সরকারই শেষ সরকার নয়। তারা মনে করছেন হাসরের দিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন। আসলে তাদের ভেতর কম্পন শুরু হয়ে গেছে। পটকা ফুটলে মনে করছে বোমা পড়েছে।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেছেন, গুমের সমাধানে এখন জাতীয় ঐক্য দরকার। আজ যারা ভাবছেন গুমের পরও তারা দায়মুক্তি পাবেন, তাদের ধারণা ভুল। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য স্থাপিত আদালতে তাদের বিচার হবে। যারা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিন্দুতে বসে আছেন তারা যেমন বিচারের আওতায় আসবেন, তেমনি এর আওতায় আসবেন মাঠপর্যায়ে যারা নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছেন তারাও।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, গুম করে সরকার অস্বীকার করছে। বর্তমান সরকারের আমলে গুম হওয়া বেশিরভাগ মানুষ বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ভিন্নমতের অনুসারী ছিলেন। গুম হওয়া কেউ ফিরে এলে কোনো কথা বলেন না।

সেমিনারে কুষ্টিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সাজুর মা শাহেদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সাত বছর ধরে আমার ছেলেকে দেখি না। আমার ছেলেরে আমি হারায়ে ফেলেছি। আওয়ামী লীগের বড় নেতারা জানে আমার ছেলে কই।’

কাঠ ব্যবসায়ী নিখোঁজ ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী নাসিমা আক্তার বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন আমি সধবা না বিধবা?’ গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা প্রেম করে বিয়ে করে পালিয়ে আছে। অন্য জায়গায় সংসার পেতেছে-এমন বক্তব্য এসেছিল একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে। এ কথা শোনার পর তার শিশুকন্যা সারা রাত কেঁদেছে। বারবার জিজ্ঞেস করেছে, সত্যিই তার বাবা পালিয়ে আছেন কিনা।

মানবাধিকারকর্মী নাসিরউদ্দীন এলান বলেন, প্রেস ক্লাবে সম্প্রতি গুমের শিকার ব্যক্তিরা কথা বলার সুযোগ পাননি। বলা হয়েছে প্রেস ক্লাবে কান্নাকাটি চলবে না। তারা আর্তনাদ শুনতে চান না। অথচ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com